
বাগানে সারি সারি খেজুরগাছ। দেখেই মন ভরে যায়। শীতকালে এ গাছ মালিক ও গাছিদের মন যেন একটু বেশিই ভরিয়ে দেয়। শীতকালে মালিকেরা মাত্র তিন মাসের জন্য একটি গাছ গাছিদের কাছে ইজারা দিয়ে পান ২০০ টাকা। আর গাছিরা খেজুরের রস ৪০ টাকা লিটার ও প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে গাছের মালিক ও গাছি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার জসিম বাজার থেকে ধলাগাছ সড়কে এবং ওয়াপদা এলাকায় গড়ে উঠেছে খেজুরের বাগান। ধলাগাছ সড়কে গড়ে ওঠা বাগানের মালিক আনিছুল হক বলেন, সড়কের দুধারে তাঁর খেজুরগাছ রয়েছে ১২০টি। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে এসব গাছ ইজারা দেওয়া হয় গাছিদের কাছে। গাছিরা প্রতিটি গাছ ২০০ টাকায় ইজারা নেন। এরপর ওই গাছ থেকে তাঁরা রস বের করে বিক্রি করেন।
ওয়াপদা এলাকার আরেক খেজুরবাগানের মালিক মুন্না বলেন, তাঁর জমিতে লাগানো রয়েছে প্রায় দুই হাজার খেজুরগাছ। শীত মৌসুমে একেকটি গাছ থেকে রস বিক্রি করে তিনি পান এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এভাবে তিনি দুই হাজার গাছ থেকে আয় করেন দুই থেকে তিন লাখ টাকা। কিন্তু তাঁকে ব্যয় করতে হয় মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের বাগবাড়া থেকে আসা গাছি আবু বক্কর সিদ্দিক (৩২) বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খেজুরগাছ ইজারা নেন তিনি। সাধারণত পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাস রসের মৌসুম বলে মনে করেন তিনি। প্রচণ্ড শীত হলে রসের চাহিদা বাড়ে এবং রসও ভালো থাকে। রসপ্রিয় মানুষেরা সকাল সকাল তাঁদের কাছে চলে আসেন। আর বাকি রস ফেরি করে শহর ও আশপাশে বিক্রি করেন। প্রতি লিটার ৪০ টাকায় ও প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকায় বিক্রি করেন। পিঠা, পায়েস প্রভৃতি তৈরির জন্য রস কেনেন বাড়ির গৃহিণীরাও। এভাবে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় শ টাকার খেজুরের রস বিক্রি করা হয়। খেজুর রস খেতে পছন্দ করে ইঁদুর, বাদুড় আর পাখি। তাই গাছে বিকেলে হাঁড়ি লাগানোর সময় রসের নিরাপত্তার জন্য নেট বা বানা ব্যবহার করতে হয়।
এদিকে যিনি খেজুরগাছ থেকে রস পেড়ে গাঁও-গেরামের মানুষের কাছে বিক্রি করেন, তাঁকে অনেকে ‘রসিয়া’ও বলে ডাকেন। এই রসিয়ারা প্রতিদিন দুটি মাটির হাঁড়ি বাঁশের ফালিতে সাজিয়ে রাস্তা দিয়ে ‘এই খেজুরের রস’ বলে উচ্চ স্বরে ডাকতে ডাকতে নিয়ে যান ভোর-প্রভাতে। এ সময় ছোট-বড় অনেকেই রসের ম-ম গন্ধ পাওয়ায় রস খেতে ছুটে আসেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোমায়রা মণ্ডল বলেন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায় প্রচুর খেজুর ও তালগাছ রয়েছে। পরিকল্পনামতো এসব গাছ রোপণ করলে এক বিঘা জমিতে ১ থেকে দেড় শ গাছ লাগানো সম্ভব। গাছ লাগানোর সাত-আট বছর পর থেকে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত রস বা ওই রস থেকে গুড় উৎপাদন করে আয় করা সম্ভব।