গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) যাত্রা শুরু হবে শিগগিরই। জিএমপিতে থানার সংখ্যা হবে ১০টি। গত বছরের ২২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভার ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়েছে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি। গাজীপুর শহর এলাকায় অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানাসহ বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে গাজীপুর শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। গাজীপুর শহরের ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার যানবাহন চলাচল করে। শহর এলাকায় একটি সমরাস্ত্র কারখানা, একটি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস (টাঁকশাল), বাংলাদেশ কৃষি ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, দুটি রেলওয়ে জংশন, একটি রেলওয়ে স্টেশন, দুটি সরকারি হাসপাতাল, একাধিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ১০-১২টি বাসস্টেশন, বিভিন্ন ব্যাংকসহ নানা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসাশিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় ও জাতীয় ইস্যুতে প্রায়ই অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েক লাখ মুসল্লির আগমন ঘটে। এই অবস্থায় জেলা পুলিশের কার্যপরিধি বেড়েছে। জেলা পুলিশের স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে যানজট নিরসন ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ১০টি থানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশে ৮ হাজার ২২৬ পদের প্রস্তাব করা হয়েছে। গাড়ি চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ২১৭টি। আর এ জন্য বছরে খরচ হবে ১৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। জিএমপির নতুন থানাগুলোর নাম হবে: সালনা, জয়দেবপুর, চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, মীরেরবাজার, বোর্ডবাজার, মৌচাক, কাশিমপুর, টঙ্গী পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম।
জানা গেছে, পুলিশের তরফ থেকে পাঠানো প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে এখন আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন হলেই যাত্রা শুরু করবে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। দেশে বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় মহানগর পুলিশ ইউনিট রয়েছে। জিএমপি হওয়ার পরও গাজীপুর জেলা পুলিশ বিদ্যমান থাকবে। বর্তমানে জয়দেবপুর, টঙ্গী থানা ও জয়দেবপুর ও মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির জনবল জিএমপির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর, টঙ্গী, ও কালিয়াকৈর থানার মৌচাক ও সফিপুর ইউপি এলাকা নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট (জিএমপি) স্থাপনের প্রস্তাব করা হলো। প্রস্তাবে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮ হাজার ২২৬টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৫টি ক্যাডার পদ। এর মধ্যে ডিআইজি পদবির একজন দায়িত্ব পালন করবেন কমিশনার হিসেবে। তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার ২১ জন ডিসি (ডেপুটি পুলিশ কমিশনার), এডিসি ৪৯ জন ও এএসপি ১৯১ জনের পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গাজীপুর-১ আসনের সাংসদ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, গাজীপুরকে মহানগর পুলিশ ইউনিটের আওতায় আনা এবং নতুন থানা স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।