মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার

ঘোড়ার আস্তাবল থেকে ভাতের হোটেল

নগর ভবনের পাশেই রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা ভাতের হোটেল l ছবি: প্রথম আলো
নগর ভবনের পাশেই রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা ভাতের হোটেল l ছবি: প্রথম আলো

পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল মোড় থেকে গুলিস্তানের দিকে একটু সামনে এগোতেই গতকাল সকালে অন্য রকম একটি দৃশ্য চোখে পড়ল। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে তখনো একের পর এক গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। নিচে দুই পাশের রাস্তায়ও অনেক যানবাহন, অনেক ব্যস্ত মানুষের চলাচল। এর মধ্যেই ফ্লাইওভারের নিচে একটি বড় অংশজুড়ে নিশ্চিন্তে খাবার খাচ্ছে বেশ কয়েকটি ঘোড়া। সঙ্গে থাকা সহিসেরা জানালেন, জায়গাটি এখন পুরান ঢাকায় গাড়ি টানা অন্তত ৪০টি ঘোড়ার স্থায়ী আস্তাবল। দেখা গেল, দুই পাশের রাস্তার জায়গায় জায়গায় ছড়ানো ঘোড়ার মল, উচ্ছিষ্ট খাবার। অনেকে নাকে রুমাল চেপে এলাকাটি পার হচ্ছেন।
আরেকটু সামনে বঙ্গবাজার মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া। সেখান থেকে কাপ্তান বাজার বাসস্ট্যান্ড হয়ে টিকাটুলী পর্যন্ত দুই কিলোমিটারেরও বেশি পথ ঘুরে ফ্লাইওভারের নিচের প্রায় সব অংশে দখল-দূষণের দৃশ্য চোখে পড়ল। এর মধ্যে যেমন রয়েছে হরেক রকম পণ্যের কয়েক শ অস্থায়ী দোকান, ভাতের হোটেল, মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জায়গা এবং রিকশা গ্যারেজ, তেমনি রয়েছে ময়লার খোলা কনটেইনার আর যত্রতত্র ফেলে রাখা আবর্জনার স্তূপ।

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে গড়ে উঠেছে আস্তাবল l ছবি: প্রথম আলো


পথচারীদের অভিযোগ, ফ্লাইওভার হওয়ার ফলে দুই পাশের রাস্তা কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তার ওপর ফ্লাইওভারের নিচের অংশটুকু দখল করে দোকান দেওয়ায় ক্রেতাদের ভিড়ে যানজট আরও বাড়ছে। এ ছাড়া ময়লার খোলা কনটেইনার রাখা এবং যেখানে-সেখানে ফেলা আবর্জনা ফেলার কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তাঁরা।
ফ্লাইওভারের নিচের অংশ দখল করে অন্তত ১৫টি ভাতের হোটেল গড়ে উঠেছে বঙ্গবাজার মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া চারপাশে কালো কাপড় দিয়ে ঘেরা কয়েকটি ক্যারম ঘরও চোখে পড়ল। এ ছাড়া বিআরটিসি মার্কেটের সামনের অংশে দেখা গেল, নিচে ২০টির মতো মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখা। যেখানে মোটরসাইকেলপ্রতি ২০ টাকা করে আদায় করা হয়। পাশেই এই টাকা আদায়ের দায়িত্বে থাকা চা দোকানি নূর মোহাম্মদ বললেন, ঢাকা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতার পক্ষে তিনি টাকাটা তোলেন। এর বেশি কিছু তিনি জানাননি।
এর ঠিক সামনে ফুলবাড়িয়া মার্কেটের কাছে ফ্লাইওভারের নিচে চোখে পড়বে বেশ কয়েকটি ফল ও জুতার দোকান। দুই পাশের রাস্তার দিকে মুখ করা দোকানগুলোর সামনে ক্রেতাদের ভিড়ে সেখানকার পথ আরও সংকুচিত হয়ে এসেছে।
ফ্লাইওভারের নিচে সবচেয়ে আবর্জনাপূর্ণ স্থানটি হচ্ছে কাপ্তান বাজার বাসস্ট্যান্ডের সামনের অংশ। সেখানে ফেলে রাখা শত শত মুরগির খাঁচা আর পরিত্যক্ত ফলের ঝুড়ি। আরেকটু সামনে রাখা তিনটি ময়লার মুখ খোলা কনটেইনার এলাকার বাতাস ভারী করে তুলেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো মাঝেমধ্যেই উচ্ছেদ করি। তাও ওরা বসে।’
তাহলে এটার স্থায়ী সমাধান কী—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ল এনফোর্সিং এজেন্সি আন্তরিক নয়। কেবল তাঁরা আন্তরিক হলেই এর সমাধান সম্ভব। আমাদের হাতে এক মোবাইল কোর্ট ছাড়া আর কিছু নেই।’