
আট বছরের জাহিনকে নিয়ে তার বাবা জাহিদুল করিম এসেছেন কবুতরের হাটে। স্কুলজীবনে জাহিদুলের কবুতর পোষার শখ ছিল। পরে পড়ালেখার ব্যস্ততায় সেই শখে ছেদ পড়ে। এবার ছেলেকে দিয়ে সেই পুরোনো দিনে ফেরত যেতে চাইছেন। বললেন, ‘গিরিবাজ’-এর জোড়া কিনলাম। এইবার বাপ-বেটা মিলে পালব।’
পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্সের ছাদে প্রতি শুক্রবার বসে কবুতরের হাট। নানা রঙের দেশি-বিদেশি কবুতর নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শৌখিন ও পেশাদার কবুতর পালকেরা এসে জড়ো হন। সকাল ছয়টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে কেনাবেচা।
গতকাল শুক্রবার সকালে সিঁড়ি দিয়ে তিনতলার ছাদে উঠতেই কানে এল এক বিক্রেতার হাঁক, ‘দেশি-বিদেশি-চায়না-সিরাজী—আসেন, আসেন...’। ছাদজুড়ে খাঁচা আর ঝাঁকাভর্তি সাদা, কালো, বাদামি ও ছাই রঙের কবুতর। আর আছেন কবুতরপ্রেমীরা।
চার খাঁচাভর্তি কবুতর নিয়ে হাটে এসেছেন আইয়ুব হোসেন। তবে নিজেকে ‘পিজিয়ন রবিন’ নামে পরিচয় দিলেন তিনি। বললেন, ‘এই নামেই সবাই চিনে’। ৪২ বছর ধরে কবুতর পুষছেন। শুরুতে শখের বশে কবুতর পোষা শুরু করলেও এখন এটাই পেশা। বললেন, তাঁর খামারে এখন নানা জাতের প্রায় চার হাজার কবুতর আছে। গতকাল ‘চিলা’, ‘হোমার’, ‘জিরাগলা’, ‘লালগলা’—এসব জাতের কবুতর হাটে নিয়ে এসেছিলেন আইয়ুব হোসেন। দাম জোড়াপ্রতি ‘চিলা’ ২-৪ হাজার, ‘বিউটি হোমার’ ২ হাজার, ‘জিরাগলা’ ২ হাজার, ‘লালগলা’ ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা বলে জানালেন তিনি।
কবুতরের এই হাটে কে ক্রেতা, আর কেই-বা বিক্রেতা, তা স্পষ্ট জানার উপায় নেই। হাটের বেশির ভাগ বিক্রেতাই শৌখিন কবুতর পালনকারী। নিজের সংগ্রহ থেকে বাড়তিগুলো যেমন বিক্রি করছেন, তেমনি অন্যের আনা কবুতর পছন্দ হলে তা আবার কিনে নিজের সংগ্রহ সমৃদ্ধ করছেন। হাজারীবাগ থেকে আসা মো. শাহাবুদ্দিন যেমন তিন জোড়া কবুতর বিক্রি করেছেন, আবার দুই জোড়া কিনেছেন। নবাবপুরের রাসেল আহমেদও তাই।
দেশি কবুতরের ভিড়ে বিশেষ আকার আর রঙের কারণে কিছু কবুতর সহজেই নজর কাড়ে। যেমন ‘হোয়াইট কিং’ নামের সাদা কবুতর আকারে বড়সড় মুরগির প্রায় সমান। মালয়েশিয়ান এই কবুতরের দাম জোড়াপ্রতি আট হাজার টাকা। ঘাড়ের কাছে পালক উল্টে থাকা বাদামি ‘জ্যাকোবিন’ দেখে মনে হয় যেন পায়রাটি গলায় পশমি মাফলার জড়িয়ে আছে। এর জোড়ার দাম ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত। আরও আছে হাত খানেক লম্বা ‘র্যান্ট’। প্রতি জোড়া তিন হাজার টাকা। হাটে বিদেশি কবুতরের নিয়মিত বিক্রেতা মো. শমসের বললেন, ‘এগুলো খাঁচায় পোষার শৌখিন পায়রা। ওড়ার প্রতিযোগিতার জন্য নয়, ওড়ার কবুতর হলো ‘গিরিবাজ’ ও ‘রেসার হোমার’।
হাটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতি হাটবারেই দু-তিন হাজার লোকের সমাগম হয়। প্রতি হাটে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বিকিকিনি হয় বলে জানান তিনি।
হাটে আসা অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতাই বয়সে তরুণ। তাদের হাঁকডাক, হইহুল্লোড়, আড্ডায় কবুতরের হাট সরগরম। ‘পিজিয়ন রবিন’ বললেন, কবুতর পুষলে ছেলেরা বিপথে যায় না। অনেক খারাপ ছেলেও কবুতর পুষে ভালো হয়ে গেছে।