পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না জলাতঙ্ক রোগের টিকা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঢাকা, মহাখালী থেকে এ টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে না। ‘আপাতত জলাতঙ্কের টিকা প্রদান করা যাচ্ছে না’ বলে জরুরি বিভাগের সামনে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে বিপদে পড়েছে স্থানীয় দরিদ্র মানুষ। তারা হাসপাতাল থেকে ফিরে শরণাপন্ন হচ্ছে গ্রামের কবিরাজ বা ওষুধ বিক্রেতাদের কাছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি থেকে এই টিকা বাজারজাত করা হলেও দাম অনেক বেশি। নোভার্টিসের এই টিকার এক ডোজের দাম ৬৪০ টাকা। ইনসেপ্টা কোম্পানির এক ডোজের দাম ৫০০ টাকা। অন্যান্য কোম্পানিও একই দামে ওষুধ বাজারজাত করছে। কাউকে কুকুর বা জলাতঙ্ক-আক্রান্ত অন্য কোনো প্রাণী কামড়ালে, তাকে এই টিকার মোট পাঁচ ডোজ দিতে হয়। সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে এই টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হলেও সরবরাহ না থাকায় এখন এই সেবা পাচ্ছে না এ এলাকার মানুষ। ফলে যাদের এত টাকা খরচ করে টিকা নেওয়ার সামর্থ্য নেই, তারা দৌড়াচ্ছে এলাকার কবিরাজের কাছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুধু পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গত আগস্টে এই টিকা গ্রহণ করেছে ২০০ জন। এর মধ্যে কুকুরের কামড়ের জন্য ৭২ জন। অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে ১২৮ জন। সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখের মধ্যে এই টিকা গ্রহণ করেছে ৩১ জন। এরপর টিকা শেষ। বর্তমানে সরবরাহ বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কুকুরের কামড় বেড়ে যায়। এটা তাদের প্রজননের মৌসুম। এখন প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন রোগী হাসপাতাল থেকে টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।
গতকাল রোববার হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে টিকার জন্য অপেক্ষা করছে বেশ কিছু রোগী। ওপরে টাঙানো নোটিশ দেখে তারা হতাশ হয়ে কর্তৃপক্ষকে গালাগালিও করছে।
হাড়িভাষা থেকে সাত বছরের ছেলে নাঈমকে নিয়ে আসা মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘তিন দিন আগে ছেলেকে কুকুর কামড়েছে। দুদিন থেকে টিকার জন্য হাসপাতালে ঘুরছি। দোকান থেকে কিনে এই টিকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাজিউর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন থেকে এ টিকার সরবরাহ বন্ধ রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন রোগী এসে ভিড় করে। আমরা তাদের পরিস্থিতির কথা জানাই। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’