Thank you for trying Sticky AMP!!

জানুয়ারির শেষে সংক্রমণ সর্বোচ্চ হওয়ার পূর্বাভাস

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে নভেল করোনা ভাইরাস

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির পূর্বাভাসবিষয়ক একটি বিশেষজ্ঞ দল বলেছে, আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। আর জুন নাগাদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ হাজার হতে পারে। তাঁরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই কমানো সম্ভব।

পাঁচজন বিশেষজ্ঞের ওই দলটি ১৪ ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়াল সভার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের এই পূর্বাভাস জানিয়েছে। ওই দলে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ আবদুল হামিদ ও শাফিউন শিমুল, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাখখার হোসেন, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নুসরাত জেবিন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। দলটি গত মে মাস থেকে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে সরকারকে নিয়মিত বিরতিতে করোনা সংক্রমণের পূর্বাভাস দিয়ে আসছে।

শাফিউন শিমুল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রহণযোগ্য গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে গত ১০ মাসের সরকারি তথ্য, বাংলাদেশের জনসংখ্যা, সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থা—এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সরকারি হিসাবে নভেম্বরের শুরু থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এরপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ আবার কিছুটা কমতে দেখা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ালেও পরীক্ষার পরিমাণ বাড়েনি। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় দৈনিক নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কম হচ্ছে। কম পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সংক্রমণের সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। দেশে দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হওয়া দরকার। এই সংখ্যক পরীক্ষা কোনো দিন হয়নি। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, সংক্রমণ আবার বাড়বে এবং তা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা বলছেন, ইতালির চেয়ে সংক্রমণ হার বাংলাদেশে কম। তবে বাংলাদেশে সংক্রমণ হার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে মৃত্যুহার ইতালি বা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম। তবে বাংলাদেশে মৃত্যুহার এই অঞ্চলের দেশ ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি। পশ্চিমা কিছু দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে দুই থেকে ছয় গুণ বেশি।

বাংলাদেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এ পর্যন্ত গত ১০ মাসে করোনায় ৭ হাজার ৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। পূর্বাভাসে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী জুন পর্যন্ত আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে আশার বিষয় হলো, দেশে মৃত্যুহার কম। যদিও মৃত্যুহার কেন কম তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, ব্যাখ্যা করাও সম্ভব হচ্ছে না।

মহামারিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই, উচিতও না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধের কাজগুলোতে আরও জোর দিতে হবে।
আবু জামিল ফয়সাল, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির পূর্বাভাসবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য

সরকারি কর্মকর্তারাও সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে চাহিদার তুলনায় আইসিইউ শয্যার কমতি দেখা যাচ্ছে। আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে—এই প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগের কাজগুলো আরও জোরদার করা হবে। আর ঢাকার চারটি হাসপাতালে ২০টি করে মোট ৮০টি আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে।

সরকার সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে মার্চ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে এবং এখনো তা বন্ধ আছে। সারা দেশে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই সময় যাতায়াত ও চলাচলে বিধিনিষেধ ছিল। শুরুর দিকে সঙ্গনিরোধ ও বিচ্ছিন্নকরণের ব্যাপারেও সরকার চেষ্টা করেছিল। এ ছাড়া মাস্ক পরতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আগের কাজগুলো আরও জোরদার করা হবে। আর ঢাকার চারটি হাসপাতালে ২০টি করে মোট ৮০টি আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে।
অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

কিন্তু বর্তমানে পরীক্ষা ও চিকিৎসা ছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোনো কাজ নেই। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক না পরেই বাড়ির বাইরে আসছে। শীতকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছে।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির পূর্বাভাসবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, মহামারিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই, উচিতও না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধের কাজগুলোতে আরও জোর দিতে হবে।