জামালপুরে নদে বর্জ্য ফেলছে পৌরসভা
জামালপুর পৌর শহরের সব ময়লা-আবর্জনা সরাসরি ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে নদের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জামালপুর পৌর শহরের বুক চিরে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবাহিত। শহরের ফৌজদারি মোড়ে নদের তীর। গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, শহরের ফৌজদারি মোড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পরিত্যক্ত একটি সেতু। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ময়লা-আবর্জনা ভ্যানগাড়িতে করে এনে ওই সেতুর ওপর থেকে নদে ফেলা হচ্ছে। সেই বর্জ্যে সেতুর ছয়টি পিলারের মধ্যে দুটির গোড়ার অংশ ঢাকা পড়ে গেছে। অনেক বর্জ্য নদের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে। নদে এখন তেমন পানি নেই। ফলে বর্জ্যের স্তূপ হয়ে গেছে। বর্জ্যের কারণে ওই এলাকায় নদটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলছেন, পৌর শহরের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদে বর্ষাকালে বেশি পানি থাকে। বছরের অন্যান্য সময় পানিপ্রবাহ এখন তেমন থাকে না বললেই চলে। এর বড় কারণ, পৌর শহর অংশে নদটি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নদ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর নদটি ক্রমেই দূষিত হয়ে পড়ছে। তবে এর জন্য সাধারণ মানুষ নয়, খোদ পৌর কর্তৃপক্ষই দায়ী।
ফৌজদারি এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন বর্জ্য নদে ফেলছে। এতে পানি দূষিত হওয়ার পাশাপাশি নদটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আগে নদের পানিতে নেমে লোকজন গোসল করত। এখন তারা দুর্গন্ধের কারণে আর পানিতে নামে না। কয়েক বছর ধরে এভাবে নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কে দেখবে এ সমস্যা? দেখার কেউ নেই। যারা দেখবে, তারাই তো এসব করছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে শহর রক্ষা বাঁধ। এই বাঁধ শুরু হয়েছে ব্রহ্মপুত্র সেতু এলাকা থেকে। শেষ শহরের পাথালিয়া এলাকায়। এই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। শহরের ফৌজদারি এলাকায় বাঁধের দক্ষিণ পাশ দিয়ে পাশে গাছ লাগানো হয়েছে। ছায়াঘেরা এই পরিবেশে শহরের অনেকেই বেড়াতে আসে। এটিই শহরবাসীর একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ নদের তীরে আসে। কিন্তু নদে ফেলা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে তারা সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এ কারণে নদের সৌন্দর্যই নষ্ট হচ্ছে।
জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌরসভার সরাসরি ইন্ধনে নদটি দূষিত ও ভরাট হচ্ছে। পৌরসভার মেয়র কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারেন না। পৌরসভা যা করে চলছে, তাতে আমরা হতবাক। মেয়রকে নদটি দূষণের হাত থেকে রক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে। যেখানে পৌরসভা দায়িত্ব হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা এবং নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ করা, সেখানে এ পৌরসভা কি না উল্টো কাজটিই করছে।’
এলাকাবাসী বলছেন, জামালপুর শহরের পরিবেশ এই ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নদটি পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলে শহরের পরিবেশও সুন্দর থাকে। নদটি পরিচ্ছন্ন রাখতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের কাজ করার কথা। সাধারণ মানুষজনকে এ বিষয়ে সচেতন করতে তাদেরই কর্মসূচি নেওয়ার কথা। কিন্তু যারা সেই কাজটি করবে, তারাই যদি উল্টো কাজটা করে, তাহলে সাধারণ মানুষকে আর সচেতন করা সম্ভব হবে না।
দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নদে ময়লা-আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে। অথচ পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম প্রথমে বিষয়টি জানেনই না, এমন ভান করেন। একপর্যায়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদে বর্জ্য ফেলা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নদে আর কেউ বর্জ্য ফেলতে পারবে না।’
আরও পড়ুন
-
স্কুল, মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের
-
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মে পর্যন্ত বন্ধ
-
আগামীকালও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
-
সামান্য রদবদলে নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় পালা বন্ধ হচ্ছে, শাখা ক্যাম্পাস হবে আলাদা প্রতিষ্ঠান