সৌদি আরব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির বাসসেবাকে সংক্ষেপে বলে স্যাপকো বাস। আমাদের দেশে যেমন বিআরটিসি। স্যাপকো বাসে মক্কা থেকে জেদ্দা, মদিনা ও বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যায়। টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন। হজযাত্রীরা ইবাদত বন্দেগির ফাঁকে বিশেষ জায়গায় বেড়িয়েও নিচ্ছেন। পরিচিতদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন।
মক্কা থেকে জেদ্দার ভাড়া ১৫ রিয়াল। বাসগুলো মার্সিডিজ বেঞ্জ কোম্পানির। বাসের ভেতরে বাথরুমও আছে। সামনের দিকে নারী ও শিশুদের বসার ব্যবস্থা। নির্ধারিত সিটে বসলাম। জানালার পাশে সিট হওয়ায় শহর দেখা সহজ হলো। রাস্তার পাশে কিছু দূর পর পর সাইনবোর্ডে লেখা, সুবহান আল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি আল্লাহর প্রশংসামূলক শব্দ। জেদ্দা পৌঁছানোর আগে আগে একটা মাঠ চোখে পড়ল। ছেলেরা ফুটবল খেলছে।
ভালো কথা, ট্যাক্সিতেও জেদ্দা যাওয়া যায়। বাব মক্কা নামতে হয়। সেখান থেকে যে যার গন্তব্যে যেতে পারেন।
বাসে এক ঘণ্টায় পৌঁছালাম জেদ্দা। বাসস্ট্যান্ডের নাম বালাদে। বালাদ মানে বড় শহর। উঁচু উঁচু সব বিল্ডিং। বিশাল বিশাল মার্কেট। এর কেন্দ্রস্থলে রাখা আছে একটা রেলওয়ে ইঞ্জিন। এই রেল-ইঞ্জিন ঘিরে জড়ো হন সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। জেদ্দায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা তো সময় পেলে, বিশেষ করে বৃহস্পতি ও শুক্রবার আসবেনই। শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে প্রবাসী শ্রমিকেরা এসে এখানে আড্ডায় মাতেন। কে কবে দেশে ফিরবেন, কে কবে দেশ থেকে আসছেন, কাকে দিয়ে আত্মীয়স্বজনের জন্য চালানি (মালপত্র) পাঠাবেন, দেশের খবর কী, হরতাল, মিছিল—সব তথ্য এখানে এলে জানা যায়। আত্মীয়স্বজন ছেড়ে প্রবাসে যাঁরা শ্রম দিচ্ছেন, তাঁরা বালাদে এলে মানসিক প্রশান্তি পান। এখানে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র আসে। প্রবাসীরা পছন্দমতো পত্রিকা কেনেন।
বালাদে পূর্বপরিচিত মাহমুদ হাসানের বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ট্যাক্সিচালক হামরা রোডের ভাড়া হাঁকলেন ২০ রিয়াল। ওখানে ট্যাক্সি লিমুজিন নামে পরিচিত। লিমুজিনে চড়ে বুঝলাম চালক পাকিস্তানি। সৌদি আরবে পাকিস্তানি চালক বেশি। এরা বেশ চালাক। আমার সঙ্গে বাংলায় বলল কই যাবেন; আমিও বুঝতে পারিনি।
মাহমুদ হাসানসহ রাতে বের হলাম সাগরপাড়ে। লোহিত সাগরের পাড়েই জেদ্দা শহর। সাগরপাড়ে বসার জন্য সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ আছে। রাত যত গভীর হয়, এখানে মানুষের জটলা তত বাড়ে। কেউ কেউ ছিপ ফেলে মাছ ধরছেন। এখানে অনেক বাংলাদেশি চিপস আর পিসপিস (লাউয়ের বিচি ভাজা) বিক্রি করেন। কয়েকজনের সঙ্গে জমিয়ে গল্প হলো।
এখান থেকে কার্নিস রোডে গেলাম। এখানে সাগরের মাঝে একটি ফোয়ারা আছে, নাম জেদ্দা ফোয়ারা। ২৬১ মিটার উঁচুতে ৩২০ কিলোমিটার গতিতে ফোয়ারার পানি ওপরে ওঠে। আর আলোর সঙ্গে পানি সংমিশ্রণে অপূর্ব দৃশ্য। প্লেন থেকেও এই ফোয়ারা দেখা যায়।