
বন্ধুরা, ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে নিমন্ত্রণ। সারা দিন বাসায় আছি। তবে বলে রাখছি, দুপুরের পর কেউ আসতে চাইলে সাঁতরে অথবা নৌকায় চড়ে আসার প্রস্তুতি নিয়ে আসবে।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বাসিন্দা উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা সৈয়দ সাখাওয়াৎ গত ২৬ জুন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুদের এভাবেই ঈদের আমন্ত্রণ জানান। ঠাট্টা মনে হলেও সাখাওয়াতের বাস্তবতা এমনই। তাঁর মতো নগরের আগ্রাবাদ ও আশপাশের এলাকার অনেকের জীবনচিত্র বদলে দিয়েছে জোয়ার-ভাটার কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা।
জোয়ারের পানিতে নিয়মিত প্লাবিত হচ্ছে নগরের দক্ষিণ আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর আগ্রাবাদ ও উত্তর-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড। সর্বোচ্চ উচ্চতার জোয়ারের সময় এসব এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যায়। তখন রিকশা ভাড়া কয়েকগুণ বেড়ে যায়। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘর থেকে বের হন না। এই সব এলাকায় প্রায় আট লাখ লোকের বসবাস। এদের অধিকাংশই জোয়ারের পানিতে কোনো না-কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জোয়ার-ভাটার সময় দেখে দিনের কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হচ্ছে তাদের।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নাঈম উদ্দিন চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলেন, তাঁর দিনের প্রথম কাজ এখন ইন্টারনেটে জোয়ার-ভাটার সময় দেখা। সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় তিনি ও ঘরের সদস্যরা ঘর থেকে বের হন না। ওই সময় বাইরে থাকলে ঘরেও আসেন না বলে জানান তিনি।
আগ্রাবাদের বাসিন্দারা জানান, জোয়ার-ভাটার সমস্যা এই এলাকার অনেক পুরোনো সমস্যা। গত আট-দশ বছরে এই সমস্যা দেখে আসছেন তাঁরা। মাঝে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মহেশ খালে বাঁধ দেওয়ার করণে জোয়ার-ভাটা থেকে মুক্তি মিলেছিল। জলাবদ্ধতা থাকলেও তা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু গত ১৩ জুন মহেশ খালের বাঁধ কেটে দেওয়ার পর এই সমস্যা আবার ফিরে এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের প্রকাশিত জোয়ার-ভাটার সূচি (টাইড টেবিল) অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে ও এর সঙ্গে যুক্ত কর্ণফুলী নদীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় দুই দফা জোয়ার ও দুই দফা ভাটা হয়। গতকাল রোববার পতেঙ্গা এলাকায় কর্ণফুলী নদীর ১০ নম্বর খাল এলাকায় সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে জোয়ারের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ২০ মিটার। আর নেভাল একাডেমির পাশে ওই খালে একই সময় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ৪৮ মিটার। ভুক্তভোগী লোকজন বলছেন, বৃষ্টি না থাকলেও সর্বোচ্চ উচ্চতার জোয়ারের সময় আগ্রাবাদ এলাকায় দুই থেকে আড়াই ফুট পানি জমে যায়। আর বৃষ্টির সময় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ৩ থেকে ৪ ফুট।
গতকাল রোববার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের কারণে নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের প্রায় ৪০০ গজ এলাকা আড়াই ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তায় ময়লা পানি থই থই করছে। পাশের এক লেন দিয়ে ধীর গতিতে গাড়ি চলানোয় যানজট সৃষ্টি হয় সেখানে।
আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের উভয় দিকে অর্ধ শতাধিক আসবাবপত্রের শোরুমসহ রয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু জোয়ার ও বৃষ্টির কারণে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। কোনো ক্রেতা যান না সেখানে। রাস্তায় পানি উঠলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকে। এই সুযোগে রিকশা ভাড়া পাঁচ-ছয় গুণ বেড়ে যায়। রিকশাতেও রয়েছে ঝুঁকি। খানাখন্দে পড়ে উল্টে যায়।
এক্সেস রোডের পর্দা কাপড়ের শোরুম সান ফ্লাওয়ারের ব্যবস্থাপক কেশব ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় দুবার জোয়ারের পানি সড়কে ওঠে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানি শোরুমে ঢুকে যায়। আমাদের ব্যবসা লাটে উঠেছে।’
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড দুই ফুট উঁচু করার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ ছাড়া মহেশ খালের দুই মুখ। একটি কর্ণফুলীতে এবং অন্যটি বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। দুই সংগমস্থলে খালটাকে চওড়া করা হবে। জোয়ারের পানি ঠেকাতে ক্রস ড্যামও হবে। এরপর আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাপারিপাড়ায় এক্সেস রোডের গর্ত ভরাট করতে ইট আনা হয়েছে। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সেখানে কাজ করা হবে।