Thank you for trying Sticky AMP!!

টিউশনিও হতে পারে চাকরির অভিজ্ঞতা

ছাত্রজীবনে আমরা কমবেশি সবাই টিউশনি কিংবা কোচিংয়ে পড়িয়েছি। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাটি চাকরি প্রত্যাশী ফ্রেশ-গ্র্যাজুয়েট কিংবা ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদনকারীরা সিভিতে কেউই সচরাচর উল্লেখ করেন না। করতে চানও না। এ বিষয়গুলোও যে সিভিতে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন অনেকেই। অথচ কিছু কৌশল খাঁটিয়ে এসবও চমৎকারভাবে রিজ্যুমিতে যুক্ত করে অভিজ্ঞতা দেখানো যেতে পারে।

টিউশনির অভিজ্ঞতা কেউই যুক্ত করতে চান না। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, যারা ভালো ছাত্র নন তারা টিউশনি করতে পারেন না। যারা পড়াশোনায় ভালো, লিডারশিপ-মেন্টরিংয়ে ভালো তারাই কিন্তু টিউশনি করাতে পারেন।

কিন্তু টিউটরিংকে পেশা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা একটি চ্যালেঞ্জের কাজও বটে। তাই অতি সাবধানে এ অভিজ্ঞতা সিভিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ছাত্রাবস্থায় টিউশনি করলে পার্টটাইম আর পড়াশোনার শেষে করলে ফুলটাইম শব্দটি উল্লেখ করতে হবে।

আমাদের একাডেমিক গ্রেড মূলত পাঠ্যবিষয়ের ওপর আমাদের দক্ষতার প্রতিফলন ঘটায়। সে বিষয়গুলোতে আমাদের পারদর্শিতা প্রমাণ করে টিউটরিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।
এখন, সিভিতে শুধু আমাদের কাজের প্রোফাইল বর্ণনা, পড়ালেখার বিষয়গুলোর উল্লেখ এবং শিক্ষার্থীদের ধরন উল্লেখ করাই যথেষ্ট নয়। বরং গুরুত্বপূর্ণ কী-ওয়ার্ডের মাধ্যমে আবেদন করা কাজের সঙ্গে টিউটরিংয়ের ব্যাকগ্রাউন্ডের রিলেটেড বর্ণনা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ক্লাসের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং শিক্ষার্থীদের মেন্টরিংয়ের যে অভিজ্ঞতা সেগুলোও গুছিয়ে সিভিতে উল্লেখ করতে হবে।

বিষয়গুলো জীবনবৃত্তান্তে এভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে—
*বিভিন্ন জটিল বিষয়াদি শিক্ষার্থীদের কাছে সহজেই বোধগম্য করেছেন।
*বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে পাঠদান করেছেন।
*শিক্ষার্থীর অগ্রগতি সম্পর্কে স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
*শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে বয়স/শ্রেণি অনুসারে নানা ধরনের শিডিউল তৈরি ও পরিচালনা করেছেন।
*শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরিতে সহায়তা করেছেন।
*শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নেতৃত্ব ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করেছেন।
*খেয়াল করে দেখবেন, যদিও আপনি কোনো চাকরি করেননি কিন্তু চাকরিদাতা কি চাচ্ছে তা মোটামুটি আপনি তুলে ধরতে পেরেছেন, যা বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।
*এ ছাড়াও আপনি এক্সট্রা আর কো-কারিকুলার কাজের অভিজ্ঞতাগুলো অবশ্যই গুছিয়ে উল্লেখ করবেন।

এগুলো কয়েকটি মৌলিক কাজের উদাহরণ মাত্র। আপনার নিজেদের অভিজ্ঞতানুসারে সংযুক্ত করতে পারবেন। তবে মিথ্যার আশ্রয় একদম নেবেন না। এটা যেমন অনৈতিক তেমনই ইন্টারভিউ বোর্ডে বা পরবর্তীতে চাকরিতেও বিপদে ফেলবে আপনাকে।

এ ছাড়া, রেফারেন্স উল্লেখ করতে গিয়ে অনেকেই নানা জটিলতার সম্মুখীন হন। যেমন আমার পরিবারের বা আত্মীয়-স্বজনের কেউই তেমন ভালো পজিশনে নেই কিংবা তারা ব্যবসা করে ইত্যাদি। এটা বাস্তবিকই একটা বড় সমস্যা, তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কমবেশি অনেক শিক্ষকের সঙ্গেই ভালোমন্দ সম্পর্ক আমাদের থাকে। এদের মধ্য থেকে সিনিয়র ক্যাটাগরির দু’জন শিক্ষকের নাম রেফারেন্সে ব্যবহার করলেই চলে। তবে বিষয়টি তাদের জানানো, প্রয়োজনে পরামর্শ চাওয়া উচিত। এতে শুধু যে তাদের নাম ব্যবহারের উপকার পাওয়া যাবে তা নয় বরং তারা ক্যারিয়ার সম্পর্কিত পরামর্শও দেবেন।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে করপোরেট ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তাদের একটা ভালো সম্পর্ক থাকে। সুতরাং, এটা ভালো করে কাজে লাগানো যেতে পারে।

আর যাদের ইন্টার্নশিপ করা আছে তারা যে কোম্পানি থেকে করেছেন ওখানকার ১ জন (উচ্চ পর্যায়ের হলে ভালো) কর্মকর্তাকে রেফারেন্স হিসেবে দেখান; আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ব্যাস, কাজ এটুকুই।

এরপরও যদি না পারেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ ভালো নয়, যা ছাড়া বর্তমান বাজারে চাকরি পাওয়া নিতান্তই কঠিন।

সর্বোপরি, আমাদের কমবেশি সবাই নেটওয়ার্কিং করে থাকি। না করলে এখনই শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইয়েরা, কাজিনরা কে কোথায় চাকরি করছেন খবর নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাদের পরামর্শ নিতে হবে। তারা অনেক কাজে আসতে পারেন চাকরি প্রত্যাশীদের।

আর শহরের বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার ক্যারিয়ার সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে সম্ভব হলে সেসবে যোগ দিতে হবে। সেগুলোতে শেখার পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং হবে সহজেই। ফেসবুকের চেয়ে লিংকডইন অ্যাকাউন্টে নিয়মিত সক্রিয় থাকতে হবে।

অবশেষে একটি কথাই বলতে পারি, নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল কখনোই হারাবেন না। আপনার যেমন চাকরির প্রয়োজন, তেমনই প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে শাণিত করে দক্ষ একজন মানবসম্পদে পরিণত হয়ে উঠুন। চাকরি করে জনগণের সেবা করুন।

লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার (মানবসম্পদ ও প্রশাসন), ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।