একাত্তরের ৩০ লাখ মানুষের রক্ত ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের কথা সঞ্চরণ রাখলেই কেউ আর খারাপ কাজ করতে পারবে না। তরুণেরাই সমাজবদলের কারিগর। ভালো শিক্ষার্থী হলেই ভালো মানুষ হওয়া যায় না। গতকাল শনিবার লালমনিরহাট, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন। প্রথম আলোর উদ্যোগে ও মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সহায়তায় দেশব্যাপী এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত দিয়ে। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা।
লালমনিরহাট: জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। বক্তৃতাপর্বে ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক বীর প্রতীক বলেন, প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ, সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড
পরিচালনার মাধ্যমে একটি নির্ভরযোগ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সংবর্ধিত কৃতী শিক্ষার্থীদের এ অনুষ্ঠান থেকে দেশপ্রেমিক ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণা খুঁজে নিতে হবে। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত জেলার তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, লালমনিরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও হাতীবান্ধা শাহ গরীবুল্লাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরাজুল ইসলাম, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শামছুল হক, লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি (টিআইবি) মো. ময়জুল ইসলাম, অধ্যক্ষ স্বপ্না জামান, ফেরদৌসী রহমান, মুক্তিযোদ্ধা এস এম শফিকুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুজ্জামান মণ্ডল, টেলিটক রংপুরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা নিয়াজ মো. নাজমুল সরকার প্রমুখ। কৃতী শিক্ষার্থীরা মাদক, সন্ত্রাস, ইভ টিজিং, দুর্নীতি ও বাল্যবিবাহকে ‘না’ বলে এসব থেকে দূরে থাকার শপথ নেয়। অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেয় অর্থি বণিক, ইলেখা বিনতে জুয়েল, শাহনেওয়াজ ও তৌকির আজিজ। সংগীত পরিবেশন করেন ওস্তাদ তাজুল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে জেলার চার শতাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
লক্ষ্মীপুর: নাছির আহমঞ্চদ ভূঁইয়া মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহামঞ্চদ সোলায়মান বলেন, সুশিক্ষাই পারে সমাজ বদলে দিতে। আর সে বদলের কারিগর মেধাবী তরুণেরা। আরও বক্তব্য দেন
সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি সাহা। লক্ষ্মীপুর কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ জি এম জাকারিয়া, লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণজিৎ কুমার পাল, বিএমএ জেলা সভাপতি আশফাকুর রহমান মামুন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা সুলতানা ইয়াছমিন মজুমদার, টেলিটকের আঞ্চলিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাছান প্রমুখ। কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেয় এ কিউ এম মহিউদ্দিন পাঠান, মাইমুনা করিম, হাফেজ মোহামঞ্চদ ওছমান ও ফারহানা আফরোজ। শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে থাকতে ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার সভাপতি মারজাহান চৌধুরী। সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি সাহা বলেন, ভালো শিক্ষার্থী হলেই ভালো মানুষ হওয়া যায় না। তোমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ জি এম জাকারিয়া বলেন, কৃতী শিক্ষার্থীদের মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। জেলার সেরা তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রতাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়কে সমঞ্চাননা সঞ্চারক প্রদান করা হয়।
বাগেরহাট: জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক দিলীপ দত্ত বলেন, বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের টিকে থাকার ওপর বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের টেকসই পরিবেশের
ভারসাম্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। তিনি কৃতী শিক্ষার্থীদের ‘পরিবেশ ভাবনার’ জগৎ বিস্তৃত করার আহ্বান জানান। আরও বক্তৃতা করেন বাগেরহাটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর হোসেন, অ্যাডভোকেট মোজাফ্ফর হোসেন, অধ্যাপক আবদুর রব চৌধুরী, অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন, কৃতী শিক্ষার্থীর অভিভাবক গোলাম মোস্তফা লাভলু, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক ফিরোজ জামান চৌধুরী, টেলিটকের কর্মকর্তা রাসেল হায়দার, কৃতী শিক্ষার্থী জেরিন আফরোজ প্রমুখ। জেলার তিনটি শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও মংলা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। সংগীত পরিবেশন করেন ক্লোজআপ তারকা পুলক, লিপু ও রাবিত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: সকাল ১০টায় শহীদ সাটু হলে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া। এ ছাড়া বক্তব্য দেন হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল
লতিফ, জাগো নারী বহ্নিশিখার আহ্বায়ক ফারুকা বেগম, প্রথম আলোর গবেষণা ও আর্কাইভবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফুল হক, টেলিটকের কর্মকর্তা আলভী ইসলাম, অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান, কৃতী শিক্ষার্থী আফিফা খাতুন, ফয়সাল সোহরাব ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুরুল হোদা। অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘মোবাইল, টিভি ও আড্ডা হচ্ছে তোমাদের তিন শত্রু। এসব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। একাত্তরের ৩০ লাখ মানুষের রক্ত ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের কথা সঞ্চরণে রাখলে তোমরা কোনো খারাপ কাজ করতে পারবে না।’ নারীনেত্রী ফারুকা বেগম বলেন, ‘দয়া করে তোমরা নারীদের উত্ত্যক্ত কোরো না।’ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ; আহাদ হায়দার, বাগেরহাট; এম জে আলম, লক্ষ্মীপুর ও আবদুর রব, লালমনিরহাট।
আজ ৮ সেপ্টেম্বর রোববার
যশোর
স্থান: জিলা স্কুল মিলনায়তন
সময়: সকাল নয়টা এবং দুপুর সাড়ে ১২টা
কাল ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
স্থান: ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন
সময়: সকাল ১০টা
নোয়াখালী
স্থান: শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন
সময়: সকাল নয়টা