গত ১৬ জুলাই ২০১৪, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ: বৈষম্য বিলোপ আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো। সহযোগিতায় বাংলাদেশ দলিত পরিষদ ও পরিত্রাণ

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: সংবিধানে সব মানুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। ধর্মীয় উগ্রবাদ, ভূমি দাসত্ব, প্রতিক্রিয়াশীল জাতপাতপ্রথা ইত্যাদি সমাজের দলিত জনগোষ্ঠীকে প্রতি পদে বাধাগ্রস্ত করছে। সব মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের অগ্রগতি নিশ্চিত হতে পারে না। এ জন্য তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে নীতিনির্ধারণী মহলকে সচেতন থাকতে হবে। শুধু আইন নয়, একই সঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন আনতে হবে। আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমান: দেশে দলিতদের অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক নয়। দীর্ঘদিন এ বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছি। সংবিধানে কোনো বৈষম্যের স্থান নেই। তার পরও সমাজের প্রতি স্তরে বৈষম্য রয়েছে। দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের যে রূপ, সেটি খুবই মর্মান্তিক। এটা মানুষের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে। জয়পুরহাটের একটি ঘটনা আমাদের হতবাক করেছে। রবিদাস সম্প্রদায়ের একজন আইনজীবী তাঁর সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে নিয়ে আইনজীবীদের ক্যাফেটেরিয়ায় খাওয়ার সময় যেসব গ্লাস ও থালাবাসন ব্যবহার করেছিলেন, সেগুলো বস্তায় করে ওই আইনজীবীর বাড়িতে পাঠানো হয় এবং তাঁকে মূল্য পরিশোধ করতে বলা হয়। কারণ, অন্য আইনজীবীরা এসব থালাবাসন ব্যবহার করবেন না। আজ একবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের ঘটনা চিন্তা করা যায়? ২০০২ অথবা ২০০৩ সালে কিছু তরুণ আইনজীবীসহ বীরগঞ্জে গিয়েছিলাম একটি গবেষণা করতে। সেখানেও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এসব ঘটনার মধ্যে যে সত্য লুকিয়ে আছে, সেটা চরম অমানবিক ও বেদনার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন কমিশন, দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনসহ সবাই মিলে একটি শক্তিশালী আইন করার উদ্যোগ নিই। কয়েকটি পরামর্শ সভার পর আইন কমিশনের সম্মতিতে বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়া প্রস্তুত করি। আইন কমিশনের উদ্যোগে সর্বশেষ আরেকটি পরামর্শ সভায় আরও কিছু বিষয় সংযোজন–বিয়োজন করে চূড়ান্ত খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। এখন আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনটি পাস হবে।
মিলন দাস: আমি দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। জীবনের প্রতি পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় একবার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে একটি মিষ্টির দোকানে খেতে যাই। আমাকে কাগজে খাবার দেওয়া হয়। গ্লাসে পানি দেওয়া হয় না।
মামার বাড়ি যাব বলে চুল কাটতে গিয়েছি। নাপিত ঋষি জানার পর চুলের এক পাশ কেটে আর কাটল না। অবশেষে মাথা ন্যাড়া করে মামার বাড়ি যাই। এভাবে আজ পর্যন্ত বৈষম্যের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। ২০০৫ সালে হামিদা হোসেন, মেঘনাগুহ ঠাকুরতা আমাদের সমস্যা দেখতে আসেন।
এ সময় থেকেই বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের আন্দোলন করতে থাকি। তখন এটাকে সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চলের সমস্যা হিসেবে দেখেছি। আজ জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমরা শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি করলেও ঘৃণার জায়গা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। দেশে আমাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। অনেক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ অর্জন করেছি। কিন্তু শিক্ষা বেশি দূর চালিয়ে নিতে পারছি না। লোকজন বলে, ‘মুচির ছেলে, লেখাপড়া শিখে ব্যারিস্টার হবে!’ মানুষ আমাদের পেশাকে ঘৃণা করে। ভবিষ্যতে কীভাবে বেঁচে থাকব, সেটা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি। দলিত নারী ও শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা ন্যায়বিচার পাই না। বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে পড়তে হয়। শিক্ষা, চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তা চাই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।
বিকাশ কুমার দাশ: ২০০৮ সালে ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশে দলিত ও বঞ্চিত সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল। এখান থেকে বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে পৃথক বরাদ্দসহ ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল। পরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ অন্যদের সহযোগিতায় আইনের একটি খসড়া প্রণয়ন করি।
আমাদের অধিকার হরণের অনেক ঘটনার মধ্যে কেবল দু-একটি উল্লেখ করতে চাই। যশোরের বাঘারপাড়ার ধলগ্রামে একটি চায়ের দোকান আছে। এখানকার ঋষিপল্লিতে বসবাসরত লোকদের এ দোকানে চা খেতে দেওয়া হয় না। একপর্যায়ে ঋষিপল্লির লোকজন দলবেঁধে চা খেতে যায়। তখন বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করেন। এ ঘটনার জের ধরে আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি হয়। নড়াইলের আগদিয়ার চরের দলিত সম্প্রদায়ের রোগীদের স্থানীয় চিকিৎসকেরা কাছে আসতে দেন না। রোগীরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। চেহারা দেখে ও কথা শুনে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দেন। বৈষম্যমূলক ঘটনার তদন্ত সেলে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে আমরা সব ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে চাই।
শাহিন আনাম: সমাজে মানুষের মধ্যে বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। তার পরও দলিত, হরিজন ও আদিবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের ফলে বৈষম্য বিলোপ আইন হয়তো পাস হবে; সরকারের দিক থেকে চাকরি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের জন্য কিছু অধিকার ফিরে এসেছে। ২০০৮ সালে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে বৈষম্য বিলোপ আইনকে জনদাবিতে পরিণত করা হয়েছে। দলিত জনগোষ্ঠী সব সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে খেতে পারে না। তাদের ঘৃণা করা হয়। বিভিন্নভাবে অপমানের শিকার হতে হয়। আজকের এ আধুনিক যুগে এসব বৈষম্য চিন্তাই করা যায় না।
বৈষম্য বিলোপ আইনের ক্ষেত্রে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নাগরিক সমাজ, আইন কমিশন সবাই খসড়া করেছে। এসব খসড়া মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আইনের রূপ দেওয়া হয়েছে। একবার একটা আইন হলে বহু বছর লেগে যায় তার সংশোধন আনতে। তাই আইনের মধ্যে কোনো দুর্বলতা থাকলে শুরুতেই সেটা ঠিক করা প্রয়োজন। এ আইনে দলিত ব্যক্তিদের বৈষম্যের বিষয়টি যত জোরালোভাবে এসেছে, অন্য বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বৈষম্যের বিষয়টি তেমনভাবে আসেনি। আইনটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে আইন কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশা করি। কোনো বঞ্চিত জনগোষ্ঠী যেন এ আইন থেকে বাদ না যায়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারীদের মন-মানসিকতায় বিশাল পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে কোনোভাবেই এ আইন কাজে আসবে না। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি।
সুষমা রানী দাস: আমরা দিন-রাত বিভিন্নভাবে অপমানিত হতে থাকি। এ অপমানের যেন কোনো শেষ নেই। একদিন একটি ফলের দোকানে দাঁড়িয়ে আছি। অন্য সম্প্রদায়ের একজন কাঁঠাল কেনার জন্য পোকায় খাওয়া একটি কাঁঠাল ধরেছে। তখন পাশ থেকে একজন বলছে, ‘পোকায় খাওয়া কাঁঠাল মুচিরা খায়। তুমি কেন এটি কিনছ?’ এটা শুনে খুব কষ্ট পেলাম। পরে দেখলাম, আমাদের সম্প্রদায়ের লোক নয়, এমন একজন কাঁঠালটি কিনে নিল। একদিন মুচিপাড়ার একটি ছেলেকে অন্য সম্প্রদায়ের একটি ছেলে মেরেছে। মুচিপাড়ার ছেলেটি মারধরের প্রতিকার চাওয়ায় অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, নারী-পুরুষদের নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। আরেক দিন হোটেলে খেতে গিয়েছি, আমাকে দেখে কয়েকজন খাওয়া রেখে বেরিয়ে এসেছে। পরে জানতে পারি, আমি ঋষি হওয়ায় তারা আমার পাশে খাবে না। আমার ছেলে ডাক্তারি পাস করেছে। মেয়ে এসএসসি পাস করে নার্সিং পেশায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর পরও যদি অপমান সহ্য করতে হয়, এর থেকে কষ্টের আর কী হতে পারে। আমাদের এই অপমানের যেন অবসান হয়, এটিই আমার চাওয়া।
রতন দাস: মুচিদের নিয়ে সমাজে ১০০ অপমানজনক প্রবাদ আছে। এমন অবস্থায় একটা জনগোষ্ঠী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? স্বপ্ন ছিল একজন শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষক হওয়ার জন্য যতটুকু যোগ্যতা দরকার, তা অর্জন করেছি। এ পর্যন্ত ৪৬টি স্কুলে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছি। একটা জায়গায় এসে বারবার থেমে যেতে হচ্ছে—আমি দলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। আমি বলি, আমি মহেশ্বর দাস নই, মুচি দাস। যখন জাত জানতে পারে, তখন আর চাকরি হয় না। প্রতিটি স্কুলে জাতপাত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কয়েকটি স্কুলে বিনা পয়সায় দীর্ঘদিন পড়িয়েছি। দুঃখের বিষয়, সেসব স্কুলেও চাকরি হয়নি। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে আটবার পরীক্ষা দিয়েছি। নাম জানার পর আর কিছু জানতে চায় না।
সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে দুবার পরীক্ষা দিয়েছি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েছি। এখনো ভেঙে পড়িনি। চেষ্টা চালিয়ে যাব। কোনো কোনো স্কুলে প্রথম হওয়ার পরও চাকরি হয়নি। শিক্ষকতার স্বপ্ন আমার মন থেকে কোনো দিনও মুছে যাবে না। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে কখনো যদি কেউ শিক্ষকতার জন্য ডাকে ছুটে যাব।
মেঘনাগুহ ঠাকুরতা: দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংসদে আইনটি পাস হোক। সংবিধানে সব মানুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে সমাজে এর কোনো চর্চা দেখি না। সমাজ থেকে বৈষম্য বিলোপ করতে হলে কিছু পরিপূরক আইনের দরকার। তাই বৈষম্য বিলোপ আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি ভালো আইন সমাজ থেকে কেবল অপরাধ দূর করে তা নয়, সমাজে একটি মূল্যবোধও প্রতিষ্ঠা করে। আইনের প্রয়োগ নিয়ে সবাই সংশয়ের কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে আমারও সংশয় রয়েছে। আইনের সঠিক প্রয়োগের জন্য সমাজে একটা মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মূল্যবোধ তৈরির সবচেয়ে ভালো মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী সেল থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম সমাজের বৈষম্যগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। আদিবাসী, বেদেসহ আরও কিছু জনগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাদের এ আইনের মধ্যে আনা জরুরি। বৈষম্য বিলোপ আইনটি সঠিকভাবে করতে পারলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের মর্যাদা বাড়বে।
সেরজো টারগা: দুটি কারণে এ আইন প্রয়োজন। এক. এ আইনের মধ্য দিয়ে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী শক্তি অর্জন করবে। দুই. আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সম্মান অর্জন করবে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনো জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য থাকতে পারে না। বর্ণবৈষম্য সবচেয়ে খারাপ একটি বৈষম্য। এটি মানবতাকে খর্ব করে। বর্ণবৈষম্যের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের প্রতিটি মানুষের সম্মানের সঙ্গে বসবাস করার অধিকার আছে। মানুষ হিসেবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে তার প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদা দিতে হবে। তাই বাংলাদেশে কোনো মানুষ যেন বর্ণবৈষম্যের শিকার না হয়, সে জন্য দ্রুত আইনটি পাস করা প্রয়োজন। প্রতিটি জনগোষ্ঠী যেন তাদের সম্প্রদায়ের জন্য গর্ব করতে পারে। আইনের মধ্যে প্রতিটি সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করা দরকার। কারণ, পরিচয়ে মানুষের সম্মান বাড়ে।
শামিমা আক্তার শিমূল: কারও আত্মপরিচয় না থাকলে সে নিজেকে ছোট ভাবতে থাকে। দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমাজে প্রয়োজন আছে। যেমন কারও হোস্টেলে সিটের (আসন) প্রয়োজন হয়, কেউ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে যায়, আবার বিভিন্ন কারণে সামাজিকভাবে নিজেকে পরিচিত করার প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে তারা নিজের সত্যিকার পরিচয় দিতে চায় না। কারণ, অন্যরা তার পরিচয় জেনে গেলে সে অপমানের শিকার হতে পারে অথবা তার উদ্দেশ্য অর্জন নাও হতে পারে। একজন মানুষ সর্বক্ষণ নিজেকে লুকিয়ে রাখে। এ অবস্থায় তার সামাজিক অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? অতএব, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিটি মানুষ যেন মাথা উঁচু করে তার আত্মপরিচয় দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা অনেকেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করছি। কিন্তু সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছি না। কোথায় যেন একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে। আমাদের আরও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অশোক দাস: বৈষম্যই যেন আমাদের নিয়তি। এ থেকে মুক্তি চাই। কিছুটা মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার আশায় আমাদের অনেকে পরিচয় পরিবর্তন করে ফেলেছে। অনেক ঋষি নিজেকে বিশ্বাস বলে পরিচয় দেয়। বেঁচে থাকার জন্য, একটু মর্যাদার জন্য নিজের উপাধি পাল্টাতে হয়, এর থেকে কষ্টের আর কী হতে পারে? তাই আমাদের জন্য এমন কিছু করা হোক, যাতে মানুষের মতো বেঁচে থাকতে পারি। ১৯৬২ সালের ভূমি জরিপে মুচিদের ‘ঋষি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার পরও বিভিন্ন বই-পুস্তকে ‘মুচি’ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র আমাদের প্রতি সঠিক আচরণ করছে না। আপনারা সবাই আমাদের সমস্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আশা করি।
নির্মল চন্দ্র দাস: দেশে অনেক আইন আছে। সব আইন যে ভালো কাজ করছে, তা কিন্তু নয়। জন্ম থেকেই বৈষম্য সহ্য করছি। বৈষম্য নিয়েই চাকরি, শিক্ষা সবকিছু করছি। কখনো নিরাশ হইনি। আইন পাসের পর বৈষম্যের শিকার হলে আইনের আশ্রয় নিতে পারব। আইন একটি শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এমন একটি আইনের জন্য দীর্ঘদিন সবাই একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। দলিত সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। তাদের মধ্যে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি অবহেলিত। আমরা না থাকলে এই শহরে আপনারা কীভাবে চলতেন? শহরকে আমরাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি। আমরা যদি ভালোভাবে থাকতে পারি, খেতে পারি; তাহলে ভালো কাজ করতে পারব। আমাদের নিজস্ব কোনো ভূমি নেই। সরকারি জমিতে বাস করি। এখানেই আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা, এখানেই মৃত্যু। তার পরও প্রতিনিয়ত উচ্ছেদের শিকার হচ্ছি। আমরা তাহলে কোথায় যাব? গত অর্থবছরে আবাসনের জন্য অর্থমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু একটা ইটও বসেনি। এই টাকাগুলো কোথায় যায়? এবার আবার ৫০ কোটি টাকা দিয়েছেন। এ টাকা দিয়েও কিছু হবে কি না, জানি না। দেশের অনেক উন্নতি হয়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।
রেজওয়ানুল করিম: আইনটি পাস হলে দলিত সম্প্রদায়ের লোকজন একটি সফলতা অর্জন করবে। এখন সংশ্লিষ্ট সবার ওপর চাপ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দ্রুত আইনটি পাস হবে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ আমরা একবার জয়পুরহাটের সার্কিট হাউসে হরিজন সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এক টেবিলে খাবার খেয়েছিলাম। এটা স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। অনেক দিন মানুষের মধ্যে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় দলিত সম্প্রদায়ের লোকজন এর মধ্য দিয়ে একধরনের মানসিক শক্তি অর্জন করেছে। এ ধরনের কাজ বেশি বেশি হওয়া উচিত। তাহলে সমাজে এর প্রভাব পড়বে। সবার মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। সাতক্ষীরা জেলায় দলিতরা বেশি বৈষম্যের শিকার হয়। আমরা চাইছি মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এ অঞ্চলে কিছু উদাহরণ তৈরি করতে, যাতে মানুষের মধ্যে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কৃষ্ণলাল দাস: বাংলাদেশে হরিজনের সংখ্যা ১৫ লাখ। আমাদের পূর্বপুরুষ ও আমরা যুগের পর যুগ সিটি করপোরেশনে কাজ করছি। শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছি। কিন্তু এখনো নাগরিক মর্যাদা পাচ্ছি না। মানবেতর জীবন যাপন করছি। হরিজন নয়, এমন জনগোষ্ঠী আমাদের পাশে বসবাস শুরু করেছে। আজকে তাদের সঙ্গে এক কাতারে নামাজ পড়তে পারি না। একসঙ্গে খেতে পারি না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি না। প্রতিবাদ করতে গেলে আরও বেশি অত্যাচার সহ্য করতে হয়। প্রায় সব ক্ষেত্রে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বাসস্থানের জন্য জমি চেয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের উচ্ছেদ করা হয়নি, হবেও না। তোমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’ তাঁর কথামতো অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। কিন্তু এ অর্থ কোথায় যায়, কী হয়, আমরা কিছুই জানি না।
সুহৃদ সরকার: দলিতরা শ্রমজীবী মানুেষর একটি অংশ। শ্রমজীবী মানুষ প্রায়ই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। দলিতরা দীর্ঘদিন যে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে, তা বৃথা যায়নি। আজকে এ জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় আইন পাস হতে যাচ্ছে। এ গোলটেবিল বৈঠক প্রমাণ করে, বঞ্চিতরা কতখানি এগিয়েছে। মানুষের সৎ উদ্দেশ্যের কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম ব্যর্থ হয় না। সব সম্প্রদায়ের মানুষকেই বৈষম্য নিরসনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
শান্তি মণ্ডল: সবাইকে অনুরোধ করব, আইনটি পাসের সময় যেন কোনো দুর্বলতা না থাকে। তাহলে এ আইনের মাধ্যমে আমাদের মতো দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন চলার পথ কিছুটা সহজ হবে। প্রায় সব সময় আমাদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করা হয়। আমাদের এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাথরুম কে যেন অপরিষ্কার করে রেখেছিল। ওই বিদ্যালয়ে পড়া আমাদের সম্প্রদায়ের ছেলেদের ডেকে সেটা পরিষ্কার করানো হলো। এভাবে অন্যের অপরাধের শাস্তি পেতে হয় আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষের। ভবিষ্যতে যেন বিনা অপরাধে শাস্তি পেতে না হয়। অসম্মানিত হতে না হয়। মানুষের মর্যাদা নিয়ে যাতে বেঁচে থাকতে পারি, সে জন্য সবাই আমাদের পাশে দাঁড়াবেন।
সঞ্জীব দ্রং: বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়া দেখেছি। আদিবাসী আইনের খসড়ায় যেটা আছে, বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়ায় সেটা নেই। যেমন দলিত ও বঞ্চিত লোকজন যে ঐতিহাসিকভাবে নির্যাতিত, বৈষম্য বিলোপ আইনের শুরুতে এ বিষয়টি থাকা উচিত, যেটা আদিবাসী আইনের খসড়ায় আছে। আমরা শেষ পর্যন্ত মানুষ। তার পরও মানুষে মানুষে কী চরম বৈষম্য! দলিতরা ঐতিহাসিকভাবে অবিচারের শিকার। তাই রাষ্ট্র যেন দলিত ও বঞ্চিতদের পক্ষে থাকে, এমন একটি নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। মানুষের পরিচয় একটা বড় ব্যাপার। নিজের পরিচয়ের মধ্যে গ্লানি থাকলে সে কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করা। কিন্তু আজকে রাষ্ট্রের পদে পদে বৈষম্য। রাষ্ট্রের ভেতর থেকে একধরনের মানবিক মূল্যবোধ তৈরি হতে হবে। আইনটি হয়তো দলিতদের বৈষম্য ও ঘৃণা থেকে রক্ষা করবে; কিন্তু তাদের ভূমির অধিকারের কী হবে? আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কী হবে? এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
এম শাহ আলম: আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আইনটি এখনো হয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে। আপনারা আইনের যেসব খসড়া আইন কমিশনকে দিয়েছেন, সেগুলো সমন্বয় করে আইন কমিশন একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। বাংলাদেশে দলিতদের সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। অন্যান্য সম্প্রদায় এ আইনের মধ্যে আসায় এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ লাখ। আজকের আলোচনায় যেসব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, আইনের মধ্যে তাদের আনা হয়েছে। অতএব, কারও বাদ পড়ার আশঙ্কা খুব কম।
আপনারা যেসব পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন, সবই লিখেছি। এর পরও যদি কিছু বাদ যায়, সেগুলো আমাদের কাছে দিলে আইনে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করব। শ্রেণিভিত্তিক প্রতিটি সম্প্রদায়ের কথা আইনে বলা আছে। তবে সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ নেই। কারণ, আমরা বিশেষ কোনো নামের নয়, বৃহত্তর আকারে নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছি। ধারণাপত্রে নাম আছে। পুলিশি তদন্তে অনেক সময় প্রশ্ন থাকে। তাই আমরা মানবাধিকার কমিশনকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। আইনের বাস্তবায়ন পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন। আপনাদের জন্য একটা ভালো আইন হবে বলে আশা করছি।
মিজানুর রহমান: দলিত, বঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য প্রান্তিক মানুষের মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আজকের এ উদ্যোগ দায়বদ্ধতার বিষয়কে আরও সামনে এনেছে। আইনের প্রয়োজন কেন? একটি আইন কাউকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে পারে না। কিন্তু ঘৃণা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করতে পারে। এটাই হচ্ছে আইনের শক্তি। আজ সবাই শক্তিশালী আইনের প্রয়োজনীয়তা ও এর প্রয়োগের কথা বলেছেন। এ আলোচনা থেকে আইনের কিছু দুর্বলতার কথা এসেছে। আইন কমিশন এগুলো বিবেচনায় নিয়েছে। তাই আইনটি খুব শক্তিশালী হবে বলে আশা করি। কেউ যদি কোনো সম্প্রদায় সম্পর্কে কোনো ঘৃণা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার জন্য যদি বৈষম্যের শিকার হন, এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে বলে প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় সেটি নেই। বিষয়টির প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি কোনো দুর্বলতা, শৈথিল্য, অবহেলা থাকে, তাহলে সেটিও বৈষম্যমূলক আচরণ হবে এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। ডোমদের শ্মশান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশন তাদের জন্য সবকিছু করবে। হরিজন জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ ১০ কোটি, ৫০ কোটি টাকা কোথায় যায়, মানবাধিকার কমিশন সেটা তদন্ত করবে। সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইবে। সবাই মিলে কাজ করলে নিশ্চয়ই সমাজ বৈষম্যমুক্ত হবে।
আব্দুল কাইয়ুম: একটি স্বাধীন দেশে মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকতে পারে না। দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য দলিত-বঞ্চিতসহ সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আলোচকেরা বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাসের গুরুত্ব অনুভব করেছেন। নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
আলোচনায় সুপারিশ
আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনটি পাস হবে
শিক্ষা, চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তা চাই
কোনো বঞ্চিত জনগোষ্ঠী যেন এ আইন থেকে বাদ না যায়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে
দলিতরা ঐতিহাসিকভাবে অবিচারের শিকার। তাই রাষ্ট্র যেন দলিত ও বঞ্চিতদের পক্ষে থাকে, এমন একটি নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে
বৈষম্যমূলক ঘটনার তদন্ত সেলে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে
প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী সেল থাকা প্রয়োজন
আইনের মধ্যে প্রতিটি সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করা দরকার
অ–দলিত/দলিত
১. হোটেল, সেলুন, রেস্তোরাঁ, ধর্মীয় স্থলে প্রবেশাধিকার
২. ন্যায়বিচার প্রাপ্তি
৩. স্থানীয় সরকার, কমিটি, ফোরামে প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ
৪. নির্বাচনকেন্দ্রিক ও অন্যান্য সহিংসতার শিকার
৫. শিক্ষা, চাকরি ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার
৬. সরকারি বিভিন্ন সেবা ও তথ্যের ক্ষেত্রে অভিগম্যতা
৭. কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার
৮. নারীদের অবস্থান
যাঁরা অংশ নিলেন
মিজানুর রহমান : চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
এম শাহ আলম : সদস্য, আইন কমিশন
শাহিন আনাম : নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
মিলন দাস : নির্বাহী পরিচালক, পরিত্রাণ এবং উপদেষ্টা, বাংলাদেশ দলিত পরিষদ
অশোক দাস : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ দলিত পরিষদ
কৃষ্ণলাল দাস : সভাপতি, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ
নির্মল চন্দ্র দাস : মহাসচিব, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ
বিকাশ কুমার দাশ : সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ দলিত পরিষদ ও পরিত্রাণ
মেঘনাগুহ ঠাকুরতা : নির্বাহী পরিচালক, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ
সঞ্জীব দ্রং : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং নির্বাহী পরিচালক, আইপিডিএস
রেজওয়ানুল করিম : কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
সেরজো টারগা : উন্নয়নকর্মী, জাভেরিয়ান মিশন, খুলনা
শামিমা আক্তার শিমূল : আঞ্চলিক পরিচালক, হেকস, বাংলাদেশ
সুহৃদ সরকার : লেখক ও সাহিত্যিক
শান্তি মণ্ডল : যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ দলিত পরিষদ
রতন দাস : দলিত প্রতিনিধি
সুষমা রানী দাস : দলিত প্রতিনিধি
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো