
কোটা সংস্কারের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। ফলে রাজধানীজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শুরুর দিকে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবির সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সম্ভাব্য ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী একনেকের বৈঠকে জানান, এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ভ্যাট বসানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
বেলা একটার দিকে সোবহানবাগ মসজিদের বিপরীত পাশে বেসরকারি ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ নম্বর ভবনের সামনের সড়কে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। এতে একপাশের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ব্যানার নিয়ে আসেন, গেঞ্জিতে লিখেছেন আমরা ‘কোটাবিহীন রাজাকার’। এদিকে ওই রাস্তায় ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ নম্বর ও ৫ নম্বর—দুটি ভবনেরই গেট বন্ধ রাখা হয়েছে।
বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ এসে তাঁদের সরানোর চেষ্টা করে। একটি লেন ফাঁকাও করে। পরে কয়েকটি যানবাহন সেই লেনে ঢুকে পড়ে। তখন শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তা অবরোধ করেন। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রামপুরা ব্রিজের কাছে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বসুন্ধরা গেটের সামনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি এবং নতুনবাজার এলাকায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) শিক্ষার্থীরা সারা দিন আন্দোলন করছেন। এতে রামপুরা ব্রিজের উত্তর পাশ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চান। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁরা এ আন্দোলন সন্ধ্যা পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘পড়াশোনা শেষে চাকরিতে গিয়ে যদি বৈষম্যের শিকার হতে হয়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নটা থেকেই যায়। আমাদের আন্দোলন কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করার জন্য নয়। কোটা সংস্কার না করা পর্যন্ত আমরা প্রতিদিন বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।’
সকাল ১০টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। এরপর তাঁরা বসুন্ধরা গেটের সামনে জড়ো হন। শিক্ষার্থীরা বিশ্বরোড থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে দুপুর ১২টায়। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্লাস শেষে বসুন্ধরা গেটের সামনে ভিড় করতে থাকেন।
এআইইউবির শিক্ষার্থী মো. মাশিকুর রহমান ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাতে লেখা ‘বৈষম্য, বৈষম্য, বৈষম্য, মানি না, মানব না’।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বসুন্ধরার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, কলাবাগানের স্টেট ইউনিভার্সিটি, তেজগাঁওয়ে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত রোববার বিকেল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।