Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে ‘পেনফিল’–এর প্রথম কারখানা উদ্বোধন এসকেএফের

দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফের টঙ্গী ওষুধ কারখানা প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার ‘পেনফিল’ তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর ঘুরে দেখেন অতিথিরা  

ইনসুলিনের কার্টিজ দেশেই তৈরি হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ও বিশ্বখ্যাত ইনসুলিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নভো নরডিস্ক যৌথভাবে ইনসুলিনের কার্টিজ তৈরি করবে। এর ফলে দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে ইনসুলিন সহজলভ্য হবে।

আজ মঙ্গলবার এসকেএফের টঙ্গী ওষুধ কারখানা প্রাঙ্গণে পৃথক একটি বহুতল ভবনে ইনসুলিনের কার্টিজ তৈরির ইউনিট উদ্বোধন করেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও এসকেএফের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন রহমান, ডেনমার্কের নভো নরডিস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট (করপোরেট) লার্স আর্নল্ডসেন এবং নভো নরডিস্কের বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক রাজর্ষী দে সরকার। কারখানা উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, ঢাকার ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন।

ইনসুলিনের কার্টিজ বিদেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করে। সেখানে বাংলাদেশে ইনসুলিনের কার্টিজ তৈরির উদ্যোগকে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা। এসকেএফের কারখানায় উৎপাদন শুরু হলে তা হবে দেশে উৎপাদিত প্রথম আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ইনসুলিন কার্টিজ। এটি প্রযুক্তি হস্তান্তর বা টেকনোলজি ট্রান্সফারের ক্ষেত্রেও বড় ঘটনা।

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী ইনসুলিন দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে শিশিতে ইনসুলিন থাকে। অন্যান্য ওষুধের মতো শিশি থেকে সুইয়ের মাধ্যমে তা বের করে রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। আবার কলমের মতো একটা যন্ত্র ব্যবহার করে ইনসুলিন দেওয়া যায়। কোনো কোনো কলম একবার ব্যবহার করা হয়, ইনসুলিন ফুরিয়ে গেলে কলম ফেলে দিতে হয়।

আবার কিছু কলম আছে যাতে ইনসুলিন শেষ হলে আবার ইনসুলিন ঢোকানো যায়। এটা ঢোকানো হয় কার্টিজের মাধ্যমে। এই কার্টিজকে বলা হয় ‘পেনফিল’। এই ‘পেনফিল’ তৈরি হবে এসকেএফের কারখানায়।

উদ্বোধনের পর থেকেই কারখানায় এই পেনফিল ভেলিডেশন শুরু হয়েছে। তবে এখনই বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীরা তা ব্যবহার করতে পারবেন না বা পেনফিল বাজারে আসবে না। ‘ভেলিডেশন’ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তা বাজারে আসবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধের পর বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশে তৈরি পেনফিল হাতে পাবেন। বছরে ৫ কোটি ২০ লাখ পেনফিল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে এসকেএফ। তবে দামের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

উদ্বোধনের আগে এসকেএফের ওষুধ কারখানার ফারাজ আইয়াজ হোসেন ভবনে পেনফিল প্রকল্প নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিমিন রহমান ট্রান্সকমের সঙ্গে নভো নরডিস্কের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসকেএফ ব্যবসার ক্ষেত্রে নীতি ও মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়, ওষুধের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করে না। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে বাংলাদেশের জন্য ওষুধ তৈরি করে এসকেএফ।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিনের গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, নভো নরডিস্কের সঙ্গে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশে কখনো ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা দেয়নি। স্থানীয়ভাবে পেনফিল উৎপাদন শুরু হলে তা দেশের মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে। অন্য দেশেও সরবরাহ করা যাবে।

এসকেএফের কর্মকর্তারা বলেন, ডেনমার্কে পেনফিল তৈরি করতে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, সেসব যন্ত্র ইউরোপ থেকে আনা হয়েছে। সহায়ক সব যন্ত্রপাতিও ইউরোপের। ডেনমার্কে নভো নরডিস্কের কারখানায় যে পরিবেশে পেনফিল তৈরি হয়, সেই একই পরিবেশ এসকেএফ নিশ্চিত করেছে।

অনুষ্ঠানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইউসুফ পেনফিলের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার কথা বলেন। এসকেএফ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে পেনফিল রপ্তানি করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফের টঙ্গী ওষুধ কারখানা প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার ‘পেনফিল’ তৈরির কারখানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা  

ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন বলেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্প খাতে এসকেএফ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এসকেএফ ও নভো নরডিস্কের এই যৌথ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের স্বাস্থ্যবিষয়ক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৯ সালে প্রথম ইনসুলিন নিয়ে নভো নরডিস্কের সঙ্গে কাজ শুরু করে এসকেএফ। তারপর ২০১২ সাল থেকে এসকেএফ তাদের কারখানায় নভো নরডিস্কের ইনসুলিন তৈরি করে বাজারজাত করেছে। পেনফিল তৈরির জন্য ২০১৮ সালে এসকেএফ ও নভো নরডিস্কের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়ে।

অনুষ্ঠানে ডেনমার্ক থেকে আসা নভো নরডিক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লার্স আর্নল্ডসেন বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নভো নরডিক্সের আছে। কিন্তু এসকেএফের মতো এত ভালো অংশীদার তিনি কম পেয়েছেন। তিনি বলেন, এসকেএফের সৃষ্টিশীল মানসিকতা আছে। তার আগে নভো নরডিস্কের বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মহাব্যবস্থাপক রাজর্ষী দে সরকার বলেন, ইনসুলিন নিয়ে নভো নরডিস্ক ১০০ বছর ধরে কাজ করছে। বাংলাদেশে তারা কাজ করছে ১৯৫৮ সাল থেকে। পেনফিল প্রকল্প মূলত প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রকল্প। এর মাধ্যমে ইনসুলিনের প্রাপ্যতা সহজ হবে।

আলোচনা অনুষ্ঠানের পর পেনফিল ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়। তারপর অতিথিদের ভবনের বিভিন্ন তলা ঘুরিয়ে দেখানো হয়।