Thank you for trying Sticky AMP!!

'দেশ ১২ হাজার টনের বোঝা মুক্ত হলো'

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি এবং আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করেছেন মামলার সাক্ষী ও ডালিম হোটেলে নির্যাতিত ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এই দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে মীর কাসেমের হাতে প্রাণ হারানো শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। পাশাপাশি দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মামলার অন্যতম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ইলিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুখ্যাত রাজাকার মীর কাসেমের ফাঁসিতে আমরা আজ আনন্দিত। আমি মনে করি, দেশ আজ ১২ হাজার টনের বোঝা মুক্ত হয়েছে।’
ইলিয়াসকে ১৯৭১-এ ধরে নিয়ে গিয়েছিল মীর কাসেম আলী। ডালিম হোটেলে কয়েক দিন নির্যাতনের পর তাঁকে কারাগারেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কারাগার থেকে ১৬ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনের মামাতো বোন হাসিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি একটি বিচারের জন্য। আজকের এই বিচারের মধ্য দিয়ে জসিমের আত্মা শান্তি পাবে। পাশাপাশি আমার প্রয়াত ফুফুর আত্মা শান্তি পাবে। এই দণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্তে আমি খুশি। আজ শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারব।’
হাসিনা খাতুন বলেন, ১৯৭১-এ তাঁর আগ্রাবাদের বাসা থেকে ভাত খেয়ে বের হওয়ার পর ফুফাতো ভাই কিশোর জসিম উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ডালিম হোটেলে। পরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। জসিম উদ্দিন হত্যার অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ হয়।
হাসিনা খাতুন বলেন, ‘শুধু মীর কাসেম নয়, সেদিন যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, সকলকে যেন বিচারের আওতায় আনা হয়—আমার এই প্রত্যাশা।’
এদিকে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পর রাত ১১টার দিকে একটি মিছিল বের হয়ে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলের সামনে শেষ হয়।
১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলী আন্দরকিল্লার পাশে মহামায়া ডালিম ভবনকে তাঁর নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন বলে সাক্ষীরা জানান। রং–বর্ণহীন ভবনটির দেয়ালের গায়ে খচিত আছে মহামায়া ডালিম ভবন। নির্মাণের সনটিও খচিত রয়েছে—১৩৭৩ বাংলা। নির্যাতনকেন্দ্রটি ডালিম হোটেল নামে পরিচিতি পায়। ওই ডালিম ভবনের মালিক চন্দ্রমোহন নাথ। যুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা সপরিবারে পালিয়ে যান।
ডালিম ভবনের পেছনে হিন্দু–অধ্যুষিত হাজারী গলি। সে সময় ওই এলাকার অনেককে ডালিম হোটেলে এনে নির্যাতন করা হয়েছিল। বাসিন্দা সাক্ষী মৃদুল দে এখনো থাকেন ওই এলাকায়।
মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংবাদ তাঁকে জানানো হলে মৃদুল দে বলেন, ‘যাঁরা মীর কাসেম আলীর হাতে ডালিম হোটেলে নির্যাতিত হয়েছিলেন, তাঁদের আত্মা আজ পুণ্যস্নান করবে। এ রকম একটি লোকের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আমি সরকারসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। একাত্তরে আমার এলাকা থেকে রণজিৎ দাশ ও টুনটু সেনকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল এই ডালিম হোটেলে।’
মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক নম্বর সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মো. ইমরান ও তাঁর পাঁচ আপন এবং চাচাতো ভাইকে এই ভবনে ধরে আনা হয়েছিল। অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল। গতকাল রাতে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে আপিল বিভাগের পুর্নবিবেচনার রায় প্রকাশ হওয়ার পর সৈয়দ মো. এমরান বলেছিলেন, ‘আমরা এই রায়ে খুশি। এতে জাতির আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে।’