নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রাকে করে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার সময় আরও ১২০ ব্যক্তিকে আটকে দিয়েছে পুলিশ। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই পোশাক কারখানার শ্রমিক। গতকাল বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকা, পাগলা রসুলপুর ও তক্কার মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁদের নিজ নিজ বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এ সময় শ্রমিকদের বহন করার অভিযোগে তিনটি ট্রাক আটক করা হয়।
বাড়ি ফিরতে না পারা কয়েকজন শ্রমিক বলেন, তাঁরা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। কাজ না থাকায় এবং খাদ্য সংকটের কারণে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকা দিয়ে ট্রাকে করে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার পথে শিশুসহ ৫০ যাত্রীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদেরকে ট্রাক থেকে নামিয়ে নিজ নিজ বাসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাকে যাত্রী বহনের দায়ে ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে রাত প্রায় ১২টার দিকে পুলিশের একটি দল ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকা থেকে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার পথে ৪০ যাত্রীসহ একটি ট্রাক আটক করে। এ ছাড়া রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তক্কার মাঠ এলাকা থেকে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার পথে ৩০ যাত্রীসহ একটি ট্রাক আটক করে। পরে ট্রাকের ওই যাত্রীদের তাঁদের ভাড়া বাসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এভাবে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন পোশাক শ্রমিক বলেন, তাঁরা এখানে ভাড়া বাড়িতে থেকে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। করোনাভাইরাসের কারণে কারখানা বন্ধ রয়েছে। তাই তাঁরা বেকার হয়ে পড়েছেন। এখানে থাকলে বাড়ি ভাড়া দিতে হবে। বাসায় খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এখানে থাকলে খাবার কোথায় পাবেন, তা তাঁরা জানেন না। এসব কারণে তাঁরা সবাই মিলে ট্রাক ভাড়া করে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। পথে পুলিশ তাঁদের আটক করে ভাড়া বাসায় ফেরত পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় নারায়ণগঞ্জকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইইডিসিআর। নারায়ণগঞ্জ থেকে লোকজন বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন। আমরা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সড়ক ও নৌপথে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। শ্রমিকদের খাদ্য সংকটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সরকার তো খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে। যদি তাঁরা খাদ্যসহায়তা না পেয়ে থাকেন, তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক নারী–পুরুষ ও শিশুকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের যার যার বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যাত্রী বহনের দায়ে সাতটি পিকআপ, একটি ট্রাক ও একটি বাল্কহেড জব্দ করে পুলিশ।