নার্সারিতে ফুলের হাসি

শীত মৌসুুমে ফুলের হরেক রং৷ ফুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত নার্সারির বিক্রেতারা৷ ছবিটি গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও ​এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
শীত মৌসুুমে ফুলের হরেক রং৷ ফুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত নার্সারির বিক্রেতারা৷ ছবিটি গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও ​এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, কসমস, পিটুনিয়া, সেলফিয়া, পিঞ্জি, চন্দ্রমল্লিকা, স্নোবল, ডানিংটাচ, সূর্যমুখী, কোটালিকা, ল্যান্টানা, নয়নতারা, পঞ্চটিয়া, লিলিয়ানসহ বাহারি সব নাম। দেশি-বিদেশি শীতের ফুলগুলোর নামের মতোই তাদের রং-রূপও আলাদা। রাজধানীর বিভিন্ন নার্সারিতে লাল, হলুদ, বেগুনি, সাদা, গোলাপি রঙের যেন মেলা বসছে। শৌখিন ক্রেতারা নার্সারি থেকে ফুলের চারা নিয়ে যাচ্ছেন নিজ বাড়িতে।
গতকাল সোমবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন নার্সারিতে এ চিত্র দেখা যায়। নার্সারিতে ঢুকতেই দোকানিরা বলে যাচ্ছিলেন বিভিন্ন ফুলের নাম। শীতের ফুল দেখে ক্রেতার মুখে হাসি দেখা দিলেও তা নার্সারির মালিক ও শ্রমিকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না। ফুলগুলোকে সুন্দর দেখাতে নিয়মিত পানি দিতে হয়। যত্ন করতে হয়। একবার ফুল ঝরে গেলে তখন সেই চারা বিক্রি হয় না। আবার ফুল ফোটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কেননা গাছে ফুল না দেখলে ক্রেতাদের মন ভরে না। এত সব করার পরও যে পরিমাণ বিক্রি হয়, তাতে লাভ বেশি থাকে না। শীতের নির্দিষ্ট ফুলগুলোর দেখা মেলে না শীতের পরে। অথচ অন্যান্য চারা সারা বছর বিক্রি করা যায়। তাই পুরোটাই ‘লস প্রজেক্ট’। এসব চারা ছোট পলি প্যাকে এবং ফুল ফোটাগুলো পাওয়া যায় টবে। বিক্রেতারা জানালেন, পলি প্যাকের চারার গড়পড়তা দাম প্রতিটি ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। বড় চারার দাম ফুলের জাত, আকার আকৃতির ওপর নির্ভর করে।

ঘরের শোভা বাড়াতে রাজধানীর এসব নার্সারিতে মধ্যবিত্ত ও শৌখিন মানুষ আসেন ফুল কিনতে l ছবি: প্রথম আলো

গ্রিন গার্ডেনের পাশেই হাকিকত নার্সারির শ্রমিক বাবুল হোসেন জানালেন, পঞ্চটিয়া দামি ফুল। সবুজ পাতার ওপরেই লাল রঙের এই ফুল হাজার টাকাতেও বিক্রি হয় অনেক সময়। এ ছাড়া শীতের সময় গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা বেশি বিক্রি হয়। এখানেই কথা হয় আশুলিয়ার পাইকারি বিক্রেতা শহীদ মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানালেন, এবারের শীতে বেচাকেনার অবস্থা খুব খারাপ। তবে কারণটা তিনি জানেন না। আগে প্রতি সপ্তাহে চারা দিতে হতো বিভিন্ন নার্সারিতে। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না।
আগারগাঁওয়ে বিমানবাহিনীর জায়গা লিজ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সবুজ বাংলা নার্সারি। বাবার নার্সারিতে সহায়তা করছেন শাহীন উদ্দিন। তিনিও কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই বললেন, ‘শীতে ব্যবসা ডাউন থাকে। যা বিক্রি করি, তা শ্রমিকদের খরচসহ অন্যান্য খরচ মেটাতেই চলে যায়।’ এখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্নিগ্ধা নার্সারি ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন কী কী কেনা যায়। মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকা থেকে রহিমা বেগমও শুধু শীতের ফুলের চারা কেনার জন্য এ নার্সারিতে এসেছেন। নিজের ফ্ল্যাটের একটি বারান্দা শুধু গাছ দিয়ে সাজিয়েছেন। সেখানে শীতের নতুন ফুল না থাকলে মন ভরে না। তাই খুঁজছেন পছন্দের ফুলটি।
নার্সারিতে ঢুঁ দিয়ে ফুলের চারার পাশাপাশি মরিচ, লেটুসপাতা, বেগুন, কমলা, মালটা, পেঁপেসহ বিভিন্ন চারা কিনেও বাড়ি ফিরছেন অনেকে।