
একটা সময় ছিল, ছবি তোলার আগে আলোকচিত্রীকে কত কী করতে হতো! ‘মাথাটা একটু ডান দিকে কাত করুন, হাত সোজা রাখুন, চোখের পলক ফেলবেন না...’ নির্দেশনা শুনলে মনে হতো, বুঝি শারীরিক কসরত চলছে। আর এখন? সাধারণের কাছে ‘ফটোগ্রাফি’র নিয়ম একটাই—যেমন খুশি তেমন তোলো!
সহজলভ্য ক্যামেরা আর ফেসবুক-টুইটারের এই জমানায় ‘সেলফি’ জনপ্রিয়তা পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। কেমন করে সেলফির জনপ্রিয়তা অতল সাগর থেকে মহাকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেল, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে চলুন, চট করে জেনে নিই, সেলফি আসলে কী?
সহজ ভাষায় নিজেই নিজের ছবি তোলাকে বলা হয় সেলফি। ক্যামেরা নিজের দিকে তাক করে ধরে অথবা আয়না ব্যবহার করে যখন আপনি নিজের একখানা ছবি তুলবেন, সেটি পড়বে সেলফির আওতায়। কোরীয় শব্দ Selca (Self Camera) থেকে Selfie শব্দের উৎপত্তি। নিজের ছবি নিজেই তোলার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহটা বহু পুরোনো। এমনকি ১৯ শতকের গোড়ার দিকে, আয়না ব্যবহার করে প্রাচীন ঢাউস আকৃতির ক্যামেরায়ও মানুষ নিজের ছবি তুলত। ২০০২ সালে যখন এ ধরনের আলোকচিত্রের একখানা নাম গজিয়ে গেল, তখনো অভিধানে এর জায়গা হয়নি। গত বছর রীতিমতো মহা ধূমধামের সঙ্গে অক্সফোর্ড অভিধানে জায়গা করে নিয়েছে সেলফি। শুধু তা-ই নয়, সেলফিকে ২০১৩ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছে অক্সফোর্ড।
জাস্টিন বিবার থেকে শুরু করে হিলারি ক্লিনটন—কে নেই সেলফিভক্তের তালিকায়? সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ‘সেলফি অলিম্পিক’ নামে নিজের ছবি তোলার প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গেছে। সাগরতলে তোলা সেলফি তো মামুলি ব্যাপার, জাপানি মহাকাশচারী আকি হোশিদে সেলফি তুলেছেন মহাকাশেও।
সারা বিশ্বই যখন সেলফি-জ্বরে আক্রান্ত, তখন আমাদের দেশেও পৌঁছে গেছে এর উত্তাপ। এক হাতে ক্যামেরা ধরে রেখে নিজের ছবি তুলতে হয় বলে অত মাপজোখের সুযোগ থাকে না। তবু, আঁকাবাঁকা ফ্রেমে ‘ক্যাজুয়াল’ ভঙ্গিতে নিজের ছবিই তরুণদের প্রিয়। যখন তখন নিজের ক্যামেরায় ক্লিক, খানিক বাদেই সেটা আপলোড হয়ে যায় ফেসবুকে। কখনো হাসিমুখ, কখনো গোমড়ামুখ, নানা ভঙ্গিমায় নিজের ছবি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন বলছিলেন, ‘স্মার্টফোন হাতে থাকলে যখন তখন নিজের ছবি তোলা যায়। ফোনগুলোতে সে রকম অপশনও থাকে। সময়গুলো ধরে রাখার একটা চেষ্টা আর কি। পরে একা বসে ছবিগুলো দেখতে মজা লাগে। ফেসবুকে আপলোড করলে বন্ধুরা মজার মজার কমেন্টও করে।’
সেলফি বেশি জনপ্রিয় তারকাদের কাছে। ভিনদেশি তারকাদের ফেসবুক কিংবা টুইটার অ্যাকাউন্টগুলোতে সেলফি আপলোড চলছে হরদম। আনাড়ি ভঙ্গিতে তোলা তারকাদের একান্ত মুহূর্তের ছবিগুলো ভক্তদের কাছেও প্রিয়। এ প্রসঙ্গে কথা হলো মডেল-অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়ার সঙ্গে। টয়ার ফেসবুক ফলোয়াররা জানেন, চমৎকার সব সেলফি আপলোড করে ভক্তদের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখেন তিনি। কথার প্রসঙ্গ শুনেই একচোট হেসে নিয়ে টয়া বললেন, ‘আমাদের তো প্রতিদিনই মেকআপ করতে হয়। একেক দিন একেক সাজ। সব সময় ছবি তোলার মতো আশপাশে কেউ থাকে না। তাই নিজেই নিজের ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখি।’
অক্সফোর্ড অভিধানে যেহেতু জায়গা পেয়েই গেছে, বাংলায় সেলফিকে কী নাম দেবেন? স্বালোকচিত্র, স্বচিত্র... কিংবা অন্য কিছু?