চট্টগ্রামের ১৬ আসন

নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীদের মা, স্ত্রী ও সন্তানেরাও

ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীদের পাশাপাশি তাঁদের স্বজনেরা যাচ্ছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। পাড়ায় পাড়ায় উঠান বৈঠক করছেন। চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ১১৪ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৫০ জনের মা, স্ত্রী–সন্তানেরা এখন প্রচারণার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। 

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে মহাজোটের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাঁর জন্য ভোট চাইতে মাঠে নেমেছেন মা হাসিনা মহিউদ্দীন। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। গত বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে আইনজীবীদের কাছে ছেলের জন্য ভোট চান নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী সব সময় আইনজীবীদের সঙ্গে ছিলেন। ব্যারিস্টার নওফেলও আপনাদের লোক। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন আপনারা নওফেলকে নৌকা মার্কায় ভোট দিন’।

একই দিন চট্টগ্রাম- ৫ (হাটহাজারী) আসনে ২০–দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের জন্য ধানের শীষের পক্ষে তাঁর স্ত্রী ফোরকান ইবরাহিম, বোন সৈয়দা নাজনিন ফেরদৌসি, সৈয়দা রোকেয়া, ছেলে সৈয়দ ফজুলল করিম মুজাহিদ উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের বাদামতল, ভুলিয়াপাড়া, খন্দকিয়া, ইউনুচনগর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। ছেলে সৈয়দ ফজলুল করিম মুজাহিদ গণসংযোগকালে বলেন, হাটহাজারীর উন্নয়নে তাঁর বাবার বিকল্প নেই।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে মহাজোটের প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের জন্য ভোট চেয়ে প্রচারণায় নেমেছেন তাঁর স্ত্রী পারভীন মাহমুদ ও মেয়ে জেরিন মাহমুদ। গত কয়েক দিনে তাঁরা নগরের জালালাবাদ, অক্সিজেন, দক্ষিণ পাহাড়তলী ও আমানবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের স্ত্রী পারভীন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, হাটহাজারীতে লাঙ্গলে ভোট দিলে মহাজোট বিজয়ী হবে। আর প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার সরকার আরেকবার প্রয়োজন। এ জন্য ভোট চাইছেন। যেখানে যাচ্ছেন লোকজনের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। কারণ হাটহাজারীতে বর্তমান সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতে কখনো তা হয়নি।  

>১৬ আসনে ১১৪ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৫০ জনের মা, স্ত্রী–সন্তানেরা এখন প্রচারণার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে মহাজোটের প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিমের পক্ষে প্রচারণায় নেমে সবার নজর কেড়েছেন তাঁর ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী। তিনি প্রতিদিনই রাউজানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যাচ্ছেন। বাবা ফজলে করিমের জন্য ভোট চাইছেন। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মহাজোটের প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুবুর রহমান মাঠে রয়েছেন। এলাকায় ভোটারদের কাছে গিয়ে তাঁর বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য আবারও সুযোগ দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর জন্য ভোট চাইতে মাঠে নেমেছেন তাঁর ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী। এক সপ্তাহ ধরে তিনি উপজেলার নাজিরহাট বাজার, ঝংকার মোড়সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বাবার জন্য ভোট চাইছেন। প্রচারণাকালে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।

বাবার জন্য প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছেলে হামলার শিকারের ঘটনা ঘটেছে। ১৫ ডিসেম্বর সাতকানিয়ার কেওচিয়া এলাকায় হামলার শিকার হন চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুক। হামলায় তিনি হাত ও মাথায় আঘাত পান। অলির ছোট ছেলে ওমর শরীফ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, প্রচারণাকালে তাঁর ভাইয়ের ওপর হামলা চালানো হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে মো. ইস্রাফিল খসরুও বাবার জন্য ভোট চেয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তাঁর ছেলে মো. ইস্রাফিল গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের হালিশহরের নতুনপাড়া ও আনন্দবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। খসরুর ছেলে ইস্রাফিল খসরু প্রথম আলোকে বলেন, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও ভোটের অধিকার আদায় করতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিকল্প নেই।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর জন্য ভোট চেয়েছেন তাঁর মেয়ে রওকত নুর চৌধুরী। একই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্য মাঠে রয়েছেন তাঁর ছেলে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মহাজোটের প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরীর জন্য গণসংযোগ করছেন তাঁর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে মহাজোটের প্রার্থী দিদারুল আলমের জন্য ভোট চাইছেন তাঁর স্ত্রী ইসমত আরা। তিনি সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহখানেক ধরে গণসংযোগ করছেন।

স্বজনদের এই তৎপরতাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ভোটাররা। তবে কেউ কেউ সতর্ক করে দিয়েছেন প্রার্থীদের। নগরের পাঁচলাইশ মির্জাপুল এলাকার বাসিন্দা রেহেনা মান্নান বলেন, ভোটের আগে যেমন তাঁরা এলাকায় আসছেন, তেমনি ভোটের পরেও যেন এই সংযোগ রক্ষা করেন এবং জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে রাখেন।