বিশেষজ্ঞের মত, ‘বিলাসিতা ও অপচয়’

পদচারী সেতুতে বসছে ব্যয়বহুল চলন্ত সিঁড়ি!

পদচারী সেতুতে ওঠার জন্য চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কাজ চলছে রাজধানীর বনানী এলাকায়। গতকাল তোলা ছবি । প্রথম আলো
পদচারী সেতুতে ওঠার জন্য চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কাজ চলছে রাজধানীর বনানী এলাকায়। গতকাল তোলা ছবি । প্রথম আলো

রাজধানীর বনানীর একটি পদচারী সেতুতে (ফুটওভারব্রিজ) প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, পদচারী সেতু ব্যবহারে অনাগ্রহী পথচারীদের আকৃষ্ট করতেই এ উদ্যোগ। তবে বিশেষজ্ঞরা এ দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় এর যৌক্তিকতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী-সংলগ্ন পদচারী সেতুতে চার দিন ধরে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কাজ চলছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘বিশুদ্ধ বায়ু, পরিবেশ ও টেকসই’ (কেইস) প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে যে আটটি পদচারী সেতু তৈরি হয়েছে, এটি তার অন্যতম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে এটিতে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো দেশে সড়কে এমন ব্যয়বহুল চলন্ত সিঁড়ি বসানো হবে বিলাসিতা ও চরম অপচয়। কারণ, এ ধরনের স্থাপনা সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণে থাকতে হয়।
কেইস প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বনানীতে চলন্ত সিঁড়ি বসানো হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে। এটি সফল হলে বাকি সাতটি সেতুতে তা করা হবে।
বনানীতে চলন্ত সিঁড়ি বসানোর কাজ করছে হরাইজন টেকনো লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে গতকাল শনিবার বলেন, মালয়েশিয়া থেকে মাশিবা কোম্পানির এই এস্কেলেটর আমদানি করা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ছয় হাজার ৭৫০ জন লোক এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
কেইস প্রকল্পের পরিচালক ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সেহাবউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকেই সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমরা এটাকে চমকপ্রদ উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’ তিনি একে রাজধানীর শপিং মল বসুন্ধরা সিটির এস্কেলেটর ব্যবহারের সঙ্গে তুলনা করেন।
কিন্তু উন্মুক্ত ও ব্যস্ত স্থানে বিপুলসংখ্যক মানুষের চাপ নেওয়া সম্ভব কি না এবং অপব্যবহার রোধ কীভাবে সম্ভব হবে—এ প্রশ্নে সেহাবউল্লাহ বলেন, ‘এখানে সার্বক্ষণিক অপারেটর থাকবে। আমরা আগে-পরে জরিপ করে দেখব। সফল হলে অন্য পদচারী সেতুতে চলন্ত সিঁড়ি বসানো হবে।’
তবে স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ভুল লোকের বহুল ব্যবহারে এটি দ্রুত নষ্ট হবে। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও আছে। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, কিছু লোকের পকেট ভারী করার জন্য এ চলন্ত সিঁড়ি আনা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় তো পদচারী সেতুতে এ ধরনের চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করা হয় না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক নগর বিশেষজ্ঞ মুজিবুর রহমান বলেন, এ ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ সবচেয়ে বেশি জরুরি। তার পাশাপাশি চাই ব্যবহারকারীদের সচেতনতা। এ জন্য সেখানে তদারকির লোক থাকতে হবে, প্রচারমাধ্যমে প্রচার লাগবে।
গতকাল বনানীতে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কাজ চলার সময় এলাকার কয়েকজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান ও গাড়ি সারাইয়ের দোকানমালিক মনসুর আলী প্রায় একই রকম মত দিয়ে বলেন, ঢাকার মতো জনবহুল শহরের ব্যস্ত রাস্তায় এ ধরনের চলন্ত সিঁড়ি বেমানান। এর অপব্যবহারই বেশি হবে।