Thank you for trying Sticky AMP!!

পুরোনো সচিবালয়ই ঢাকা মেডিকেল কলেজ

পুরোনো ছবি, বর্তমান ছবি

ইউরোপীয় স্থাপত্যে তৈরি দোতলা একটি ভবন। সামনে মাঠ। তাতে সদ্য লাগানো হয়েছে দু-একটি গাছ। হুট করে দেখলে মনে হতে পারে, আদালত কিংবা কোনো প্রশাসনিক ভবন। ফেসবুকে সক্রিয় ‘ঢাকা: ফোর হানড্রেড ইয়ারস হিস্ট্রি ইন ফটোগ্রাফ’ শীর্ষক একটি পাতায় উনিশ সালের শুরুর দিকের এই ছবিটি পাওয়া গেল। সাবেক এবং বর্তমান ছাত্ররা দেখলেই বুঝবেন, এটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছবি। তবে প্রশাসনিক ভবন ভেবে কেউ ভুল করতেই পারেন, কারণ বঙ্গভঙ্গের পর নবগঠিত বাংলা ও আসাম প্রদেশের সচিবালয়ের জন্য ১৯০৪ সালে এই ভবনটি নির্মিত হয়েছিল। জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া থেকে জানা গেল, বঙ্গভঙ্গ রদ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ভবনের একাংশে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র, আরেকটি অংশে ছাত্রাবাস এবং অবশিষ্টাংশে কলা অনুষদের শিক্ষা ভবন। এদিকে পূর্ববঙ্গের মানুষ এ অঞ্চলে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখনকার একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রস্তাব করে। কিন্তু সরকারি আনুষ্ঠানিকতা করতে দেরি হয়ে যায়। এর মধ্যেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তখন এই ভবনটি আমেরিকান বেস হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধ শেষে আমেরিকানরা চলে গেলে ১৯৪৬ সালে এ ভবনটিতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন মেজর ডব্লিউ জে ভারজিনকে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আহমদ রফিকের স্মৃতি-বিস্মৃতির ঢাকা মেডিকেল কলেজ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখানে চলে আসেন। তাঁদের হাত ধরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা। শুরুতে কোনো ছাত্রাবাস না থাকায় ব্যারাক বা ছাউনি বানিয়ে ছাত্ররা থাকতেন। এই ব্যারাকই ভাষা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র রূপে আবির্ভূত হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক আমতলা (বর্তমান জরুরি বিভাগের পাশে) থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর তৈরি হয় বাঙালির নতুন ইতিহাস।
লেখা: শরিফুল হাসান, ছবি: হাসান রাজা