চিত্র প্রদর্শনী

প্রকৃতি, সংগীত ও কাজী গিয়াস

আজ বেঙ্গল শিল্পালেয় শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন। গতকাল সেখানেই নিজের অাঁকা ছবিগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী l ছবি: প্রথম আলো
আজ বেঙ্গল শিল্পালেয় শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন। গতকাল সেখানেই নিজের অাঁকা ছবিগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী l ছবি: প্রথম আলো

ধ্রুপদ সুরস্রষ্টা মোজার্টের নাম কে না শুনেছে! তাঁর লং প্লেতে ধারণ করা সব সুর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিডিতে স্থানান্তর করেছে জাপানের নামকরা কোম্পানি আসকা শিঁশা। প্রচ্ছদে প্রয়োজন চিত্রকর্ম। তালিকায় ছিল রুশ শিল্পী ভাসিলি কানদিন্স্কি ও সুইস-জার্মান শিল্পী পল ক্লিয়ের নাম। বিমূর্ত চিত্রকলায় তাঁদের সুখ্যাতি অনেকটাই প্রবাদপ্রতিম। কিন্তু জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশের শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের চিত্রকর্ম দেখে কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনলেন। পরে তিন খণ্ডে ৩৬টি সিডিতে গিয়াসউদ্দিনের ১৫টি চিত্রকর্ম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
সেই কাজী গিয়াসউদ্দিনের কাজ অনেক দিন পর আবার দেখার সুযোগ পাবে বাংলাদেশের দর্শক। চতুর্থবারের মতো তাঁর একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বেঙ্গল শিল্পালয়। উদ্বোধনের আগের দিন প্রদর্শনী নিয়ে কথা হলো শিল্পীর সঙ্গে। বললেন, এখানকার ৩৯টা কাজের অনেকগুলো ছবিই আঁকা হয়েছে পাঁচ-ছয় বছর সময় নিয়ে। কয়েক স্তরে তেলরঙে অনেকগুলো ছবি আঁকা।
প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘নোটেশন: রিকনস্ট্রাক্টেড’। কেন? সে কথায় পরে আসা যাক। এখন জেনে রাখুন, প্রকৃতির মধ্যে থাকতে ভালোবাসেন শিল্পী। প্রতিটি ছবির শিরোনামই তার সাক্ষ্য দেয়। কয়েকটার নাম—‘আন্ডার দ্য স্কাই’, ‘বিফোর দ্য রেইন’, ‘ব্লু হারমোনি’, ‘সাউন্ড অব নেচার’। শিল্পী বললেন, তিনি বেড়ে উঠেছেন গ্রামে। পরে চারুকলায় পড়ার সময়ও তাঁর মতো আউটডোরে ছবি নাকি কেউ আঁকত না। বিদেশেও প্রচুর ঘুরেছেন। বিমানে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ইউরোপের বেশির ভাগটা দেখেছেন ট্রেনের জানালা দিয়ে। সাভারে নিজের কাজের জন্য যে স্টুডিও বানিয়েছেন তিনি, সেটার সামনের প্রতিটি গাছ তাঁর হাতে লাগানো। তাঁর কাছে প্রকৃতি একরকম সংগীত। তাই ছবিতে প্রকৃতি ও সংগীতের প্রভাব থাকবে, সে তো জানা কথা!
ছবিতে তিনি এনেছেন পুরাণও—রামায়ণ, মহাভারত থেকে অনুপ্রাণিত তাঁর কয়েকটি ছবি। প্রকৃতি, সংগীত, পুরাণ থেকে নেওয়া মোটিফ আর অবয়বগুলো পুনর্নির্মাণ করেছেন ক্যানভাসে বা ওয়াশিতে (জাপানি কাগজ), তাই প্রদর্শনীর অমন নাম—‘নোটেশন: রিকনস্ট্রাক্টেড’। চলবে আগামী ২৬ মে পর্যন্ত, প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা।
প্রদর্শনীতে থাকছে বৃষ্টি নিয়ে জলরঙের কয়েকটি কাজ। প্রথমে দেখলে তেলরং মনে হয়। স্মিত হেসে শিল্পী বললেন, ‘তাঁর শিক্ষকেরাও মাঝে মাঝে এ ভুলটি করে বসেন।’ একই সঙ্গে জল ও তেলরঙের কাজে স্বচ্ছন্দ হওয়ায় তাঁর চিত্রকর্মগুলো আলাদা মাত্রা পেয়েছে।
দেশে-বিদেশে অন্তত ৬০টি একক চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে কাজী গিয়াসের। এ ছাড়া যৌথ প্রদর্শনী তো আছেই। আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া এই বাংলাদেশি শিল্পীর রয়েছে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনাও।
ধানমন্ডি ২৭-এ অবস্থিত বেঙ্গল শিল্পালয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনা করবেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। সভাপতি হিসেবে থাকবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
১৯৭৫ সালে শিল্পীর জাপানগমন। ১৯৯৩ সালে সাভারে স্টুডিও নির্মাণ। তার পরের ২২ বছরে বছরের দুই মাস বাংলাদেশে, পরের দুই মাস জাপানে পরিবারের সঙ্গে। এভাবে বছরে তিনবার আসেন দেশে ছবি আঁকতে। এখানকার ছবিগুলো কোথায় আঁকা? বললেন, বড় বড় সব ছবি এখানেই আঁকা। টোকিওতে প্রদর্শনী হলে এখান থেকে ছবি যায় সেখানে। কেন? শিল্পীর পাল্টা প্রশ্ন, টোকিওর ছোট্ট স্টুডিওতে এত বড় ছবি আঁকা যায়?