
খুব সকালে উঠে পড়তে হয়, না হয় পাখিরা সব তুঁত ফল খেয়ে ফেলে। কিন্তু যে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠি না সব সময়। এই তো যেমন বুলবুলি, মাথায় ঝুঁটি আর লেজের নিচে লাল বাতি। এ যেন আমাকে রেড সিগন্যাল দিচ্ছে—‘এই ফল সব আমার তুমি দূরে রও।’ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না। আমার তাড়া খেয়ে সে ঠিকই ছুটে পালায় আর এই ফাঁকে আমি বাকি ফলগুলো লুফে নিই।
আমাদের বাড়ির পশ্চিমে এক পাশে বাঁশঝাড় আর অন্যদিকে খড়ের গাদা। সেই খড়ের গাদা সামনে রেখে আরও অন্যান্য গাছের সঙ্গে সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুঁতগাছটা। উজ্জ্বল বাদামি রঙের গাছটা উচ্চতায় প্রায় আমার দ্বিগুণ হবে, তবে অতটা মোটা নয়। পাতা সবুজ, জবা ফুলের পাতার মতো চারদিকে খাঁজ-কাটা তবে আকারে বড় আর কিছুটা খসখসে। অনেক ডালপালা, প্রত্যেক ডালে পাঁচ আঙুল পরপর জোড়ায় জোড়ায় পাতা। পাতার গোড়ায় চার-পাঁচটা করে থোকায় থোকায় ফল ধরে। ফল আকারে বাদামের মতো ছোট, কচি অবস্থায় হালকা সবুজ, ধীরে ধীরে লাল-গোলাপি এবং পাকলে কালো আর রসালো হয়ে ওঠে। কাঁচা অবস্থায় টক আর পাকলে টক-মিষ্টির স্বাদ। পাখিদের প্রধান আকর্ষণ এই কালো তুঁতগুলোই। এক ঠোকরে অর্ধেক নেয় তো বাকি অর্ধেক গাছে ঝুলতে থাকে কানের দুলের মতো।
বর্ষার পানিতেই ও সন্তুষ্ট। এর বাইরে বছরের কোনো একটা সময়ও এর গোড়ায় পানি দিয়ে তৃষ্ণা মিটিয়েছি বলে মনে হয় না। তবুও ডালভর্তি ফল দিতে কার্পণ্য হয় না গাছটার। তাতে আমি যেমন খুশি, তার চেয়ে বেশি খুশি ওই ঠোকরে খাওয়া পাখির দল। টুনটুনি আর বুলবুলির হামলাই পড়ে বেশি।
তবে গাছটার জন্য কিছুই যে করিনি তা কিন্তু নয়। আশপাশে আর কোথাও নেই যে এই ফল—সে আমার জানা। তাই আমি এই ফল রক্ষায় নেমে পড়লাম। এই ফলে বীজ নেই, তাই ডালই ভরসা। আম্মার কথায় ডাল কেটে পুঁতে দিলাম এক বর্ষায়। বাহ্! টিকে গেল ডালটা, হয়ে গেল গাছ। আর দুই বছর না যেতেই ফল দিতে শুরু করল। বাচ্চা তুঁতগাছটা। একবার ক্যাম্পাসে এনে বন্ধুদের চমকে দিলাম এই তুঁত ফল দিয়ে। তারা এ ফল খাবে কী, দেখেনি এমনকি নামও শোনেনি কখনো। ভয়ে ভয়ে হাতে নেয় আর একের পর এক প্রশ্ন থাকে—নাম কী? স্বাদ কেমন? কীভাবে খায়...? প্রথম দিকে এই অপরিচিত ফল মুখে নিতে চাইল না। হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল। একসময় একটা তুঁত মুখে নিল। তারপর আরেকটা। পরে এমন হলো—একেবারে কাড়াকাড়ি অবস্থা।
এমএ হান্নান, ঢাকা