
বিদ্যালয় ছুটির সঙ্গে সঙ্গে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বই-খাতা হাতে নিয়ে একটি ফুলবাগানে ঢুকে পড়ে। পরে বাগানে ঢুকে দেখা গেল, সেখানে ফুটে আছে নানা রঙের ফুল। বাগানমালিকের ছেলে একটি লিচুগাছের নিচে চেয়ারে বসে আছেন, মালি চারা তুলে শিক্ষার্থীদের হাতে দিচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী দেখিয়ে দিয়ে বলছে, এটা না, ওটা।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ভাউলাগঞ্জ সড়কের পাশে ভোগডাবুরী ইউনিয়নের নিজ ভোগডাবুরী কাঁঠালতলী গ্রামে গত বুধবার বিকেলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
কয়েকজন কোমলমতি শিক্ষার্থী ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীরা সেখানে ফুলের চারা কিনতে এসেছে। এ সময় কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শারমিন আকতার বলে, ‘বাগানে ফুটে থাকা থোকা থোকা ফুল দেখতে খুব ভালো লাগে, আর ফুল সবাই পছন্দ করে। ওই ভালো লাগা থেকে বাড়িতে ফুলের বাগান করার জন্য এখান থেকে চারা নিতে এসেছি। ফুলসহ একটি গাদা ফুলের চারা নিলাম ২০ টাকায়, এর আগেও কিনেছি। কালকে আবারও আসব, তখন অন্য একটা নিব।’ ফুলের চারা কেনার টাকা পাও কোথায়? জানতে চাইলে সে বলে, ‘টিফিনের জন্য বাড়ি থেকে যে টাকা দেয়, তা থেকে বাঁচিয়ে ফুলের চারা কিনি।’
একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির সাবিনা ইয়াসমিন বলে, ‘টাকা পেলে ফুলের চারা কিনি। ফুলের বাগান করা আমার শখ। আজকে ক্যালেন্ডুলা ফুলের চারা নিয়েছি। আমি প্রায় সময় স্কুল থেকে ফেরার পথে এখানে ফুলের চারা নিতে আসি।’
নিজ ভোগডাবুরী কাঁঠালতলী গ্রামের বাসিন্দা তোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই পথে যাওয়ার সময় ফুলের গন্ধে এখানে একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ পাই। প্রায় সময় দেখি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ এখানে এসে ফুলের চারা ও ফুল সংগ্রহ করে। এই নার্সারি দেখে ছোট-বড় অনেক নার্সারি এই এলাকায় এখন দেখা যাচ্ছে।
ওই নার্সারির ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, এই নার্সারির নাম পঞ্চনীল নার্সারি। প্রতিদিন এখানে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুলের চারা বিক্রি হয়। মানুষকে ফুল চাষে আগ্রহী করে তুলতে বাগানের মালিক এস এম আবদুল্লাহ স্বল্পমূল্যে চারা বিক্রির জন্য বলেছেন। কোমলমতি শিশুরা বেশি করে চারা কিনতে আসে। তাদের পছন্দমতো চারা দিতে হয়। এই নার্সারিতে গাঁদা, চায়নিজ গাঁদা, হাইব্রিড গাঁদা, গোলাপ, টগর, কুনসুমিয়া, ক্যালেন্ডুলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ৫০ প্রকারের দেশি-বিদেশি ফুলের চারা রয়েছে। এখানে ফুলের চারার পাশাপাশি আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, নারিকেল, লটকন, সবেদাসহ নানা ফলের চারা উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয়।
বাগানের মালিক এস এম আবদুল্লাহর ছেলে মো. মজনু মিয়া বলেন, এখানে ৪২ বিঘা জমির ওপর নার্সারি, পুকুর ও বাগান করা হয়েছে। এই বাগান থেকে উন্নত জাতের বিভিন্ন ফল, ফুলের চারা বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি আম, লিচু, পেয়ারা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের চারাও বিক্রি করা হয়। এখানে ১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। তবে কোমলমতি শিশুদের আগ্রহের কারণে ফুলের নার্সারির পরিধি আরও বাড়ানো হবে।