
গ্রামের মানুষ পাকুড়গাছকে বটগাছ বলেন। এটা তাঁদের বহুল প্রচলিত ভুল। এই ভুলেই গাছটিকে কেন্দ্র করে জায়গাটির নাম পড়েছে ‘মধুপুর বটতলা।’ হোক বটগাছ, নাহয় পাকুড়গাছ—শতবর্ষী এই গাছকে গ্রামবাসী কাটতে দেবেন না।
গাছটি ঘিরে গ্রামবাসীর অনেক স্মৃতি। গাছটি তাঁদের ঠিকানা হয়ে উঠেছে। তাঁরা ঠিকানাহীন হতে চান না। কিন্তু গাছটি কাটার জন্য দরপত্র করা হয়েছে। ঠিকাদার গাছ কাটতে চান। শেষমেশ গ্রামবাসী বুধবার মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে যান। রাজশাহীর পবা উপজেলার মধুপুর বটতলা মোড়ে গাছের সামনেই এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ, শরিফুল ইসলাম, জুয়েল রানা প্রমুখ। তাঁরা বলেন, এই গাছ তাঁরা কোনোভাবেই কাটতে দেবেন না। কেউ গাছ কাটতে এলে তাঁরা সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন। আগে তাঁদের শরীরে পড়বে কুড়ালের কোপ। এরপর গাছে। তাঁরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে অনেক স্মৃতিচারণামূলক কথাও বলেন।
গাছটি রাজশাহী জেলা পরিষদের মাটিতে আছে। সম্প্রতি জেলা পরিষদ রাজশাহী শহরের কাশিয়াডাঙ্গা থেকে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট সড়কের ১৯টি গাছ দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করেছে। রাস্তার পাশের সব কটিই বড় গাছ। বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকায়। রাজশাহী মহানগরের বকুল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী গাছগুলো কিনেছেন। কিছুদিন থেকে কাটাও হচ্ছে।
গত সোমবার শ্রমিকেরা শতবর্ষী এই পাকুড়গাছটি কাটতে যান। তখনই সামনে গিয়ে দাঁড়ান গ্রামবাসী। আসেন ক্রেতা বকুল হোসেন। তিনি কিনেছেন জানিয়েও গাছ কাটতে পারেননি। সেদিনই গ্রামের ১০০ জন বাসিন্দা গণস্বাক্ষর করে গাছটিকে বাঁচানোর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজদার রহমানও এতে সই দিয়েছেন। পরে বুধবার সকালে গ্রামবাসী গাছটিকে না কাটার দাবিতে মানববন্ধন করলেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার প্রথম আলোকে বলেন, অনেক আগে দরপত্র হয়েছে। কোন গাছ তিনি মনে করতে পারছেন না। কিছুক্ষণ পরে তিনিই ফোন করে বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন গাছটি ছায়া দেয়। তাই লোকজন কাটতে দিতে চান না। লোকজন বাধা দিলে কাটতে হবে কেন? তিনি বলেন, তিনি বলে দিয়েছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।