বদলে যাচ্ছে পান্থকুঞ্জ
পার্কের হাঁটাপথের আশপাশে জমে থাকা বর্জ্যের স্তূপ উধাও। ভেতর ও চারপাশের ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাসমান মানুষের বসতি কিংবা অবৈধ স্থাপনাগুলো নেই। রীতিমতো জঙ্গলে রূপ নেওয়া ঝোপগুলো পরিষ্কার। বসার বেঞ্চ ও ছাউনিগুলো ঝকঝকে। সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন পথচলতি মানুষ।
এই চিত্র কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের। কিছুদিন আগেও ত্রিভুজাকৃতির পার্কটি ছিল ছিনতাই ও মাদক সেবনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আখড়া। এখন সেখানে বেড়ানোর পরিবেশ ফিরছে। ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পার্কটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পের আওতায় ডিএসসিসির আরও ৩০টি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন নকশা অনুসারে পার্কটিতে সীমানাদেয়াল থাকবে না। এখানে স্থাপন করা হবে একটি উন্মুক্ত ক্যাফেটেরিয়া ও গ্রন্থাগার। থাকবে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান। পার্কটি যাতে নারী–পুরুষ–শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে, নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়েছে। পরিবর্তন প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছু গাছ কাটতে হবে, তবে ছোট–বড় পাঁচ শতাধিক গাছ বাঁচানোর চেষ্টা থাকবে।
গত সোমবার দেখা যায়, পার্কের কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন অংশে অস্থায়ী টিনের বেড়া লাগানোর কাজ শেষ। ভেতরের বিভিন্ন অংশে গজিয়ে ওঠা ঝোপগুলো নেই। জলকাদায় মাখা হাঁটার পথগুলো এখন পরিচ্ছন্ন। প্রতিটি গাছের গোড়ায় রং করে বসানো হয়েছে ক্রমিক নম্বর। কাঁঠালবাগান অংশে টিনের বেড়া দেওয়ার কাজ করছেন কিছু শ্রমিক। এ সময় পার্কের দক্ষিণ–পশ্চিম কোণে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করতে দেখা যায় কিছু কিশোরকে। তাদের গল্পের বিষয়বস্তু, এশিয়া কাপে বাংলাদেশ–আফগানিস্তানের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ।
জানা গেল, কিশোরদের সবাই পান্থপথ, কাঁঠালবাগান ঢাল, ফ্রি স্ট্রিট স্কুলসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। ওদের ভাষ্য, সংস্কারকাজ শুরুর আগে তারা এখানে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলত। এখন খেলা বন্ধ। কিন্তু তারা সবাই চায়, পার্কটি এবার যেন নতুন করে সেজে ওঠে। তাই এই পরিবর্তিত পরিবেশে তারা সবাই খুশি। আহনাফ নাবিল নামের এক কিশোর বলল, ‘কয়েক বছর আগেও পার্কটি খুব সুন্দর অবস্থায় ছিল। কিন্তু মাঝে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তাতে এখানে আসতেই ইচ্ছে করত না। এখন মনে হয় পরিবেশটা আবার বদলাচ্ছে।’
এর আগে পার্কটির বেহাল অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তখন আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন। স্থানীয় প্রবীণদের যাঁরা এখানে ব্যায়াম করতে কিংবা সময় কাটাতে আসতেন, তাঁদের কথায়ও ছিল হতাশার সুর। সেই সুর এখন বদলাচ্ছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে আহমেদুর রশীদ নামের এমন এক প্রবীণকে দেখা গেল, নাতিকে হাতে ধরে গাছ চেনাচ্ছেন। পার্কের বর্তমান পরিবেশ সম্পর্কে এই জ্যেষ্ঠ নাগরিকের বক্তব্য, ‘দুই মাস আগের অবস্থার সঙ্গে পার্কের এখনকার পরিবেশের পার্থক্য আকাশ–পাতাল। কিন্তু এই ইতিবাচক পরিবর্তন ধরে রাখাটাও জরুরি। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সবকিছু আগের মতো হয়ে যায়। আশা করব, বিষয়টি কর্তৃপক্ষ মাথায় রাখবে।’
জায়গাটি পড়েছে ডিএসসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায়। এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ হামিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি, সংস্কারের পর পার্কটি ঢাকার অন্যতম সুন্দর স্থাপনায় পরিণত হবে। এটা হয়ে উঠবে নারী–শিশু–প্রতিবন্ধীসহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের নিরাপদ বেড়ানোর জায়গা।’
পার্কটির নকশা করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান সাতত্য। নতুন নকশায় পার্কের সীমানাপ্রচীর না রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতত্যের প্রধান স্থপতি রফিক আজম বলেন, ‘আগে পার্কটির চারপাশেই গ্রিল দেওয়া ছিল। পার্কে ঢোকা কিংবা বের হওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল। উদ্দেশ্য ছিল পার্কটিকে দখলদারত্বের হাত থেকে রক্ষা করা, এর পরিবেশ রক্ষা করা। আমরা দেখেছি তাতে কাজ হয়নি। বরং এর ভেতর দিয়ে পার্কের আসল ব্যবহারকারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আর দেয়ালের আড়ালে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে গেছে।’
এই স্থপতি আরও বলেন, ‘সীমানাদেয়াল উঠিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্কটির সঙ্গে এর ব্যবহারকারীদের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। এতে করে তাঁদের ভেতর একটা মালিকানার বোধ তৈরি হবে, দৃষ্টিসীমা প্রসারিত করার সুযোগ থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, পান্থকুঞ্জের এক পাশে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ। কিন্তু ওপারে সি আর দত্ত রোডে যাওয়ার জন্য একজন পথচারীকে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। দেয়াল না থাকলে পথচারীরা সহজেই মাঠের ভেতর দিয়ে ওপারে যেতে পারবেন। চাইলে পার্কের সবুজে একটু বিশ্রাম নিতেও পারবেন। এমনটা ভেবেই নতুন নকশায় পার্কের ভেতরে একটি ক্যাফেটেরিয়া ও পাঠাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন
-
ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মিলের নাম মনোনয়ন দিলেন বাইডেন
-
আরব আমিরাত ও সৌদি সরকারের বাইরে এক, ভেতরে আরেক
-
ডলারের মূল্য ও সুদহার বৃদ্ধি: ব্যবসার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা
-
চুল পরীক্ষা করে জানা গেল, বিখ্যাত সুরকার বিটোফেন কেন বধির ছিলেন
-
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর বিরোধ ছিল কী নিয়ে