Thank you for trying Sticky AMP!!

বর্ষার ফুলের হাসি

বর্ষার ফুল কৃষ্ণচূড়া। গতকাল রাজধানীর ক্রিসেন্ট লেকে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানে গানে বন্দনা করেছেন বর্ষার, আর বর্ষার ফুলের, ‘এই শ্রাবণ-বেলা বাদল-ঝরা/ যূথীবনের গন্ধে ভরা/...বাদল-সাঁঝের আঁধার-মাঝে/ গান গাবে প্রাণ-পাগল-করা।’

করোনার অতিমারিতে জবুথবু মানবকুল। জীবন ও জীবিকা টিকিয়ে রাখার অবিরত লড়াই চারদিকে। এর মধ্যেই প্রকৃতি আপন আলোয় উদ্ভাসিত। কখনো চড়া রোদ, কখনো অবিশ্রান্ত ধারায় বৃষ্টির নাচন। ঋতুর নাম যে বর্ষা। আষাঢ় মাস পেরিয়ে শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে। বিকেলের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা বলে দেয় শরৎ সমাগত।

আষাঢ়ের প্রকৃতিতে কদম ফুল বর্ষার প্রতীক হয়ে আমাদের মনে দোলা দেয়। কবিরাও করেছেন কদমের জয়গান, ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’। আষাঢ়ের প্রথম দিবসে কদম যেন ফুটতেই হয়! বর্ষার দূত কদমের সৌরভ এখন কিছুটা কমে এসেছে বটে। তবে শ্রাবণেও গ্রামের যেকোনো ঝোপের প্রান্তরে বা জলাশয়ের ধারে দেখা যায় কদমের হাসি। আমাদের শহরগুলোতে কদমের ঠাঁই হয়েছে উদ্যানে।

বর্ষাপ্রেমীরা বলে থাকেন, বর্ষাকালে কদম ফুল যদি দেয় দৃশ্যের আনন্দ, কেয়া ফুল তবে দেয় সৌরভের গৌরব। যৌবনের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথায়, ‘রিমি ঝিম রিমি ঝিম ঐ নামিল দেয়া/ শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া।’

বসন্ত যদি হয় ঋতুরাজ, বর্ষা তবে প্রকৃতির রানি। বর্ষায় প্রকৃতি নিজেকে ধুয়ে-মুছে সজীব ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

অতিসম্প্রতি রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ধানমন্ডি লেক লাগোয়া অঞ্চল, হাতিরঝিল ঘুরে বর্ষার ফুলের সৌন্দর্য দেখার সুযোগ ঘটল। চোখ ও মনের এ এক পরম তৃপ্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে আষাঢ়ের শুরুতে আকারে বড়, সাদা বর্ণের পাপড়ি ও হলদে পরাগকেশরের সমাহারে দৃষ্টিনন্দন যে চালতা ফুল দেখা গিয়েছিল, এখন তাতে এসেছে ছোট ছোট কচি ফল। রমনা উদ্যানেও আছে চালতা গাছ, তবে এখন ফলবতী হওয়ার মতো বড় হয়নি গাছগুলো।

সোনালু গ্রীষ্মের ফুল। জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন সড়কে প্রতিবছর সোনালু ফোটে হলুদের পসরা সাজিয়ে। ফুলের রেশ থাকে আষাঢ় অবধি। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে জুড়ি নেই সোনালুর।

গ্রীষ্মকালে ফোটা কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য বর্ষাতেও উপভোগ্য। এই শহরের জন-উদ্যানে, ক্যাম্পাসের সুপরিসর চত্বরে—কোথায় নেই কৃষ্ণচূড়া? রঙিন কৃষ্ণচূড়া বর্ষার প্রকৃতিতেও নাগরিক সুখের অনন্য উৎসরূপে বিরাজ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেন প্রেমিকের হলুদ খামের চিঠির অপেক্ষায় বসে আছে বিরহী রাধাচূড়া।

তবে ৪১১ বছর বয়সী রমনা উদ্যানে গেলে আপনাকে সহাস্যে স্বাগত জানাবে বেলি, টগর, বকুল, নাগকেশর, রঙ্গন, গন্ধরাজ, কাঞ্চন, চন্দ্রমল্লিকা, বাগানবিলাস, মোরগফুলসহ কত না ফুল। আপনার হৃদমাজারটা পূর্ণ হবে অনির্বচনীয় সুখানুভূতিতে।
শহরে শাপলা-শালুক, পদ্মের দেখা না মিললেও তা দেখতে আপনাকে যেতে হবে ঘর হতে মাত্র দু পা ফেলে দিগন্তবিস্তৃত আড়িয়ল বিলে।

করোনাকালে বড় হয়েছে রাজধানীর নাগরিক-ছাদবাগানগুলো। এই বর্ষায় সেখানে ফুটেছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, জবা, হাসনাহেনা, দোলনচাঁপা, কামিনী, জুঁই, লিলি, নয়নতারা, দোপাটি, মোরগঝুঁটি, কলাবতীসহ কত না ফুল। এসব ফুল একদিকে হাঁসফাঁস করতে থাকা নাগরিক মনে খানিকটা হলেও আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে আসে, অন্যদিকে ফুলের রং-ঘ্রাণে আপনার অন্দরের ভেতর-বাহির যেন পায় নবজীবন।
বর্ষার সময়ে ছাদবাগানে খুব একটা পানি দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। কেবল খেয়াল রাখতে হয় টবে গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে। টবে পানি জমলে তাতে আশ্রয় নিতে পারে এডিস মশা, যা মারাত্মক ডেঙ্গু রোগের কারণ।

মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। কমছে বৃক্ষের। কারণে-অকারণে অনবরত কাটা পড়ছে বৃক্ষ। লাভের অঙ্কের হিসাব মেলাতে অনেকেই কদম, চালতা সৃজনে অনীহা প্রকাশ করছেন। অথচ কদম, চালতা ছাড়া বর্ষা বেমানান। আবহমান কাল ধরে আমাদের প্রকৃতিকে বর্ষার ফুল সাজিয়ে চলেছে অকৃত্রিম উদারতায়। জনমনে তাই বোধোদয় আসুক। দিন দিন বিস্তৃত হোক বর্ষার ফুলের হাসি।