Thank you for trying Sticky AMP!!

বেঁচে যাওয়া এক ভাই আইসিইউতে, আরেক ভাই ও বোন হাসপাতালে

একসঙ্গে পাঁচ ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মা মানু রানী সুশীল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের চকরিয়ার হাসিনাপাড়ায়

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা এলাকায় তিন দিন আগে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় একসঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন হাসিনাপাড়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র সুশীলের পাঁচ ছেলে। একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সুরেশের দুই ছেলে ও এক মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন আছেন আইসিইউতে।

তাঁদের সুস্থতার জন্য তাঁদের মা মানু রানী সুশীল প্রার্থনা করছেন। তাঁদের স্বজনেরাও তাঁদের জ্ঞান ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

পুলিশ ও সুরেশের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ভোরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় সুরেশের পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন সুরেশের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে।  ঘটনার ১০ দিন আগে ৩০ জানুয়ারি সুরেশ মারা যান। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে  যোগ দিয়ে তাঁরা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানে একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হয়।

বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন স্মরণ সুশীল। ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্রের মেয়ে মুন্নী সুশীল।

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের মধ্যে সুরেশের ছেলে রক্তিম সুশীল (৩৫) পড়ে আছেন চট্টগ্রাম মহানগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। অপর ছেলে প্লাবন সুশীল (২৩) চিকিৎসাধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর মেয়ে হিরা সুশীল (৪৫) চিকিৎসা নিচ্ছেন চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে।

মুন্নী সুশীল প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁদের ভাই রক্তিম সুশীলের অবস্থা সংকটাপন্ন। গতকাল বুধবার রাতে সেখানকার আইসিইউতে ৭২ ঘণ্টা পার হয়েছে, কিন্তু ভাইয়ের নড়াচড়া নেই। চিকিৎসকেরাও ভালো খবর দিচ্ছেন না।

রক্তিম সুশীল থাকেন রামুর চৌমুহনী এলাকায়। হাসপাতালে তাঁর দেখভাল করছেন স্ত্রী শান্তা শর্মা। শান্তার সঙ্গে আছে একমাত্র সন্তান অন্তিক শর্মা। শান্তা শর্মা বলেন, তাঁর স্বামীর পেটের ওপর দিয়ে চাপা দিয়েছিল পিকআপ ভ্যানটি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাতে রক্তিম সুশীলের হাড় ভেঙে গেছে। হাসপাতালে ভর্তির প্রথম দিন ১০ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল। এরপর দেওয়া হয় আরও ৫ ব্যাগ রক্ত, সব রক্ত ফুসফুস দিয়ে নাকি বেরিয়ে গেছে। স্বামীর নড়াছড়া নেই দেখে সবাই উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়ার হাসিনাপাড়ায় শোকাহত মানু রানী সুশীলের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তোলা ছবি

মুন্নী সুশীলের স্বামী খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্লাবন সুশীলের অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে না। গত বুধবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে হঠাৎ তিনি মাটিতে পড়ে যান। এখনো তিনি কথা বলতে পারছেন না।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে খগেশপ্রতি চন্দ্র বলেন, গতকাল বুধবার রাতে গুরুতর আহত সুরেশের মেয়ে হিরা সুশীলের পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। পিকআপ চাপায় তাঁর দুই পায়ে গুরুতর জখম হয়েছিল, ধাক্কায় পায়ের হাড় ভেঙে গেছে, মাথায় জখম হয়। হাসপাতালের শয্যায় তিনিও অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন।
হিরা সুশীলের বিয়ে হয় মহেশখালীর ঝাপুয়াবাজার এলাকার। তাঁর স্বামী টিটু রাম শীল প্রবাসী। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে ৭ ফেব্রুয়ারি দুই ছেলেকে নিয়ে হিরা সুশীল মহেশখালী থেকে হাসিনাপাড়ায় আসেন।  

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুরেশের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে লোকজনের ভিড়। সুরেশের স্ত্রী মানু রানী সুশীলসহ পরিবারের সদস্যরা নিহত পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান পালন নিয়ে ব্যস্ত। আগামীকাল শুক্রবার এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হবে জানিয়ে মানু রানী সুশীল (৬০) বলেন, স্বাভাবিক কারও মৃত্যু হলে ১০ দিন পর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়, আর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে চার দিনের মাথায় করতে হয়। ‘আমার পাঁচ ছেলের মৃত্যু তো স্বাভাবিকভাবে হয়নি’ জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মানু রানী সুশীল। তিনি রক্তিম সুশীলের রোগমুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত পিকআপ ভ্যানের চালক ও তাঁর সহকারীতে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ প্রসঙ্গে চকরিয়ার মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শেফায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়েছে। ভ্যানের চালক ও মালিককে শনাক্তকরণের কাজ চলছে। চালক ও তাঁর সহকারীকে আটক করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, এটা দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড।