
লালবাগের শ্মশানঘাট থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত সদরঘাট-গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশ দখল করে পাঁচ শতাধিক অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের জায়গায় অবৈধভাবে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও তাঁতী লীগের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এতে খানাখন্দে ভরা এই সড়কে দিনভর যানজট লেগে থাকে। কিন্তু তা উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সদরঘাট-গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের এই অংশটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২২, ২৪, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। কিন্তু বেড়িবাঁধ সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড দুটি কামরাঙ্গীরচরে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বেড়িবাঁধের এসব দোকান থেকে দিনে প্রায় লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ফলে দিনে দিনে বেড়িবাঁধে দোকানপাটের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বছরে একবারও খোঁজখবর নেয় না পাউবো।
১১ ও ১২ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, লালবাগের শ্মশানঘাট থেকে হাজারীবাগ রোড পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে পাঁচ শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সড়কের দক্ষিণ পাশেই দোকানের সংখ্যা বেশি। বেড়িবাঁধের একাংশ ও বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে টিনশেডের এসব দোকান তৈরি করা হয়।
এ ছাড়া এই সড়কের পৃথক স্থানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের লালবাগ থানা ছাত্রলীগ, লালবাগ থানা শ্রমিক লীগ ও লালবাগ থানা তাঁতী লীগের কার্যালয় আছে। ১১ ও ১২ জুন কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখা গেছে। সড়ক ঘেঁষে এসব দোকানপাটের কারণে নবাবগঞ্জ পার্ক ও কামরাঙ্গীরচর সেকশন সেতু এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
নবাবগঞ্জের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, পাঁচ বছর আগেও বেড়িবাঁধ সড়কে তেমন কোনো দোকানপাট ছিল না। সড়কেও ময়লা-আবর্জনা কম ছিল। কিন্তু দিনে দিনে পাল্লা দিয়ে সড়ক ও বুড়িগঙ্গা নদী দখল বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের অস্তিত্ব থাকবে না।
স্থানীয় লোকজন মনে করেন, এসব দোকানপাটের কারণে দিনভর সড়কে যানজট লেগে থাকে। দোকানপাট উচ্ছেদ করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পারলে মূল শহরের যানজট কমবে। মানুষ সহজেই গাবতলী থেকে বাবুবাজার, সদরঘাট, শ্যামবাজার ও শ্যামপুর এলাকায় যাতায়াত করতে পারবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অন্তত ছয়জন নেতা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন, বেড়িবাঁধের এই দখল-বাণিজ্যের সঙ্গে তাঁদের দলের নেতা-কর্মীরাই জড়িত। তাঁরা সড়ক ঘেঁষে দোকান তুলে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট পরিমাণের ভাড়া নিচ্ছেন। এ ছাড়া দোকানের পেছনে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল ময়লা-আবর্জনা ও পুরোনো বাড়ির কংক্রিট দিয়ে ভরাট করছেন। তবে দলের কোন কোন নেতা জড়িত, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তাঁদের নাম-পদ বলতে রাজি হননি তাঁরা।
দুই বছর ধরে নবাবগঞ্জ পার্ক অংশের বেড়িবাঁধে জামা-কাপড়ের ব্যবসা করেন উজ্জ্বল দাস। তিনি বলেন, লালবাগ থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আজগর আলীর সহযোগিতায় তিনি দোকান বসিয়েছেন। দোকান ভাড়া বাবদ দিনে ৪০০ টাকা তাঁকে দিতে হয়। কয়েক দিন পরপর তিনি টাকা নিতে আসেন। তবে আজগর আলীর মুঠোফোন নম্বর বা তাঁর বিস্তারিত ঠিকানা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের (কমিটি নেই) নেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বেড়িবাঁধের দুই পাশে যে যার মতো দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পাউবো। তারা এই সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানান তিনি।
তবে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বেড়িবাঁধ সড়কে লালবাগ থানা ছাত্রলীগের কোনো কার্যালয় আছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। কার্যালয় থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জানতে ১২ জুন বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন পাউবোর ঢাকা ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি সন্ধ্যার পর ফোন দেওয়ার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি আর ধরেননি।
গতকাল রোববার রাতে রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।