ভাষাবিজ্ঞানী আফিয়া দিল আর নেই

আফিয়া দিল
আফিয়া দিল

ভাষাবিজ্ঞানী ড. আফিয়া দিল আর নেই। ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোর নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৯০ বছর।
২০০৩ সাল থেকে আফিয়া দিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোর অ্যালিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (সাবেক ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর স্বামী আনোয়ার দিলও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক।
ড. আফিয়া খাতুনের জন্ম ১৯২৭ সালে ঢাকায়, পৈতৃক নিবাস বর্তমান নরসিংদীতে। ১৯৪০ সালে ইডেন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় মুসলমান মেয়েদের মধ্যে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ইন্টারমিডিয়েটেও একই ফল। ইডেন কলেজের এই কৃতী ছাত্রী ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। তিনি ইডেন কলেজে অধ্যাপনার (১৯৫৪-১৯৬১) মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি ১৯৫৩ সালে নিউজিল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে লিডারশিপ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে আফিয়াই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি শিক্ষকতা করেছেন পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সম্প্রসারণ সেন্টার, ঢাকা ও পশ্চিম পাকিস্তান শিক্ষা সম্প্রসারণ সেন্টার, লাহোরে। তিনি পড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি, কলাম্বিয়া ও সান ডিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ড. আফিয়ার প্রথম স্বামী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক (১৯১৮-৬৫)। শামসুল হক ও আফিয়া খাতুন দম্পতির দুই সন্তান উম্মে বতুল ফাতেমা জোহরা এবং উম্মে বতুল তাজমে তাহেরা। পরে ড. আফিয়ার আবার বিয়ে হয় সহকর্মী ভাষাবিজ্ঞানী পাঞ্জাবের জলন্ধরের অধিবাসী অধ্যাপক আনোয়ার দিলের সঙ্গে।
আফিয়া দিলের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার, বেঙ্গলি নার্সারি রাইমস: অ্যান ইন্টারন্যাশনাল পারসপেকটিভ, টু ট্র্যাডিশনস অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ।
তাঁর বাংলায় লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের পত্র, ক্যারোলাইন প্রাটের আই লার্ন ফ্রম চিলড্রেন (বাংলা অনুবাদ (১৯৫৫)), যে দেশ মনে পড়ে (১৯৫৭, ভ্রমণকাহিনি), হেলেন কেলারের লেখা মাই টিচার (বাংলা অনুবাদ: হেলেন কেলার আমার শিক্ষক)। এ ছাড়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস চাঁদের অমাবস্যা ও নাটক তরঙ্গভঙ্গ তিনি বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। স্বামী আনোয়ার দিলের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন উইমেন্স চেঞ্জিং পজিশন ইন বাংলাদেশ: ট্রিবিউট টু বেগম রোকেয়া, ডেভেলপিং সেকেন্ডারি এডুকেশন ইন ওয়েস্ট পাকিস্তান। তাঁদের ৪০ বছরের যৌথ গবেষণার ফসল ইংরেজিতে রচনা করা ৭৭৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থ বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ।