মন দিয়ে লেখাপড়া করো, শিশুদের প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু-কিশোরদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি শুধু আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা কথাই বলব, সবাইকে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। কারণ, এ দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার তোমরাই। সুতরাং, তোমাদেরকে আজকের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকের শিশু এবং আগামী দিনের কর্ণধারদের আমি বলব, দেশের জন্য, জাতির জন্য সব সময় যেকোনো ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ, মহান ত্যাগের মধ্য দিয়েই যেকোনো মহান উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়—জাতির পিতা এটাই আমাদের শিখিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই না এ দেশে কোনো জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ থাকুক। কারণ, এই জঙ্গিবাদের সত্যিকার আঘাতটা আমরাই পেয়েছি। আমি চাই, এ দেশ একটি শান্তির দেশ হবে। উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হবে। আমি জানি, এটা অর্জন করা খুব কঠিন। আজকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসেছে, এখানে আনতে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক সংগ্রাম-ত্যাগ করতে হয়েছে।’

গুরুজনকে সম্মান জানানোর জন্য আগামী প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, পিতা-মাতা, শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে। বড়দের কথা শুনতে হবে। নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। আর মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার প্রযুক্তিশিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। একটা মানুষও এ দেশে ক্ষুধার্ত থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না, শিশুরা শিক্ষার জন্য সবাই স্কুলে যাবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। তাদের মেধাবিকাশের সুযোগ হবে—এ ধরনের সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণা করে বলেন, ১৯৬৪ সালে রাসেলের যখন জন্ম হয়, তখন আব্বা (বঙ্গবন্ধু) নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত। আব্বা তখন নির্বাচনের কাজে চট্টগ্রামে। আইয়ুব খানের মার্শাল ল’-এর যুগ সেটা। সেই সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রাসেলের জন্ম। জন্মলগ্ন থেকে সবার মাঝে বেড়ে উঠলেও পিতৃস্নেহ সে খুব কমই পেয়েছে। রাসেলের নামকরণ বিখ্যাত মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে রাখার স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘রাসেলের নামটি আমার মায়েরই রাখা। সে সময় বাড়িতে বই পড়ার রেওয়াজ ছিল। বঙ্গবন্ধু সময় পেলেই কবিতা আবৃত্তি করতেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করতেন। বার্ট্রান্ড রাসেলের বইগুলো থেকে তরজমা করে মাকে শোনাতেন। তাঁর ফিলোসফি আব্বার খুব পছন্দ ছিল। আমার মা খুব জ্ঞানপিপাসু ছিলেন, লেখাপড়ার তেমন সুযোগ না পেলেও আব্বার বাংলা তর্জমা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। শুনতে শুনতে তিনিও রাসেলের ফিলোসফির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং ছোট ছেলের জন্মের পর তাঁর নাম রাসেল রাখেন।’

শেখ রাসেল স্মরণে আয়োজিত শিশু–কিশোর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কারও বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, সংগঠনের মহাসচিব মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী, সংগঠনের উপদেষ্টা সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। শিশু নাফিস বিন নাদিমও শিশুদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি কে এম শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বর্তমান (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর) বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ রাসেলের জন্ম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে ঘাতকেরা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শিশু রাসেলকেও। তখন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত শেখ রাসেল।