শীতে গরিব মানুষের কষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল

টানা শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে ঠান্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে উত্তরের গরিব মানুষের কষ্ট বেড়েই চলেছে। বিরূপ আবহাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগবালাইও বাড়ছে। শীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো বীজতলাসহ রবিশস্যের আবাদ।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কুড়িগ্রাম: জেলায় চার শতাধিক চরে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। উলিপুর উপজেলার মশালের চরের কোরবান আলী মণ্ডল বলেন, চরের দুই শ পরিবারের অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর। শীত বেশি পরায় গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট বেড়েছে। জামাল শেখ বলেন, ‘জমিতে কালাই, বাদাম পইড়া আছে। শীতের কারণে তুলতে পারতাছি না।’ মোগলবাসা এলাকার কৃষক জব্বার আলী বলেন, ‘জমি তৈরি করেও চারা লাগাতে পারছি না। শ্রমিক পাওয়া যায় না।’
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া কার্যালয়ের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও দু-এক দিন চলতে পারে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে শীতজনিত রোগে ১৫৯ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে শিশু ৫০ জন।
পঞ্চগড়: গতকাল দুপুরের পর সূর্যের মুখ দেখা গেলেও উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে প্রচণ্ড ভিড়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত দুদিনে ৩৮ জন শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে বর্তমানে শয্যা পাচ্ছে না শিশুরা। শিশুদের জন্য মাত্র ২০টি শয্যা। আক্রান্ত শিশুদের মেঝেতে থেকেই কোনো রকমে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গতকালই ১৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের বেশির ভাগই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
সৈয়দপুর (নীলফামারী): এলাকাবাসী জানান, সৈয়দপুরে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বীজতলা পলিথিনে ঢেকে রাখতে হচ্ছে। কামারপুকুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতামধুপুর, বাঙ্গালিপুর ও বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, খাল-বিল ও নদীর ধারে অনেকেই এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন।
দলুয়া গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান, আমিনুল রেহমান ও আবেদ সরকার বলেন, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। তাই পলিথিনে বীজতলা ঢেকে রাখা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোমায়রা মণ্ডল বলেন, কোল্ড ইনজুরি নামক বালাই থেকে রক্ষা পেতে বীজতলায় দিনে ও রাতে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
বদরগঞ্জ (রংপুর): গতকাল বিকেলে চিকলী নদীর তীরবর্তী শাহাপুর জেলেপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খড়কুটায় আগুন জ্বালিয়ে লোকজন শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। সেখানে জেলেখা বেগম (৫৬) বলেন, ‘বাবা, মোক দেখার কাঁয়ো নাই। একখান মোটা জাম্পার দেন। না হইলে ঠান্ডাত মুই মরি যাইম।’ রংপুর আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, গত শনিবার রংপুরের তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ এবং গতকাল ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বদরগঞ্জ বাজারে রিকশাচালক ইব্রাহীম মিয়া (৪৮) বলেন, ‘সারা দিনে রিকশা চলেয়া ১৫০ টাকা কামাই। দুইটা ছইলের পুরানা জাম্পার ২৫০ টাকার কম দেওচে না। ওই টাকায় জামাও হওচে না। কিনি নাই। ঠান্ডা কয়দিন থাকে দেখি।’