Thank you for trying Sticky AMP!!

শেষ সময়ে ১৩ টিভি, ১৪ রেডিওর লাইসেন্স

শেষ সময়ে এসে রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও ১৩টি বেসরকারি চ্যানেলের অনুমোদন দিল সরকার। কয়েক দিন আগে দেওয়া হয় ১৪টি এফএম রেডিওর লাইসেন্স।

দু-একটি ছাড়া সব কটি টিভির সঙ্গেই ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সাংসদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ টিভির জন্য সুপারিশ করে এর নেপথ্যে মালিকানা রেখেছেন, আবার কেউ কেউ নিজেরাই সরাসরি জড়িত রয়েছেন। তালিকায় কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম থাকলেও তাঁদের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেছে। একই পরিস্থিতি রেডিওর ক্ষেত্রেও। আবার টিভি ও রেডিও— দুটোরই লাইসেন্স পেয়েছেন এমন ভাগ্যবানও রয়েছেন একাধিক।

গত রোববার তথ্য মন্ত্রণালয় সরকারের শেষ সময়ে এসে লাইসেন্সের অনুমোদন চূড়ান্ত করেছে। অথচ বলা হচ্ছে, এখন নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা কেবল নিয়মিত কাজ করবেন। তথ্য মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন পেল।

জানতে চাইলে মুঠোফোনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নতুন টিভি চ্যানেলগুলোর অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের ব্যাংক, বিমা, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মাছ ধরার ট্রলার ও টেলিযোগাযোগের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

শেষ সময়ে এভাবে একসঙ্গে এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের প্রসারের দিক বিবেচনায় যে কারও টেলিভিশন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে সরকারের শেষ সময়ে এসে এভাবে দলীয় ব্যক্তিদের টেলিভিশন দেওয়া হলে গণমাধ্যমের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে। শেষ সময়ে এসে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধও হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে দলীয় বিষয় প্রাধান্য পায় কি না, সেটিও একটি প্রশ্ন।

বর্তমান সরকারের আমলে এর আগে ১৮টি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুনগুলো মিলিয়ে এর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩১। আর সব মিলিয়ে দেশে এখন বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা ৪১। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ১০টি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছিল।

দেশে চালু টেলিভিশন চ্যানেলের অনেকগুলোই ভালোভাবে চলছে না। এই সরকারের অনুমোদন পাওয়া চ্যানেলের মধ্যে দুটি এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি। অথচ দেওয়া হলো আরও অনুমোদন। আবার অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনুমোদন পাওয়া টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের বেশির ভাগেরই চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনার সক্ষমতা নেই। অনেকেই লাইসেন্স নিয়ে পরে উচ্চ মূল্যে মালিকানার বড় অংশ বিক্রি করেছেন। আর এই পথে বিনা মূলধনে লাভবান হয়েছেন রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া অনেক টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক। এখনো বিক্রির অপেক্ষায় আছেন কেউ কেউ।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, ১৩টি টিভি চ্যানেল হলো: ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ শাহরিয়ার আলমের রেনেসাঁ টিভি; আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর রংধনু টিভি, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নাম আছে এইচ এম ইব্রাহিমের; সাংসদ সুকুমার রঞ্জনের সুপারিশ করা নিউ ভিশন টিভি, যার সঙ্গে আছেন সাংবাদিক শাহ আলমগীর; প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ঢাকা বাংলা মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ঢাকা-বাংলা টেলিভিশন; বন ও পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সুপারিশ করা গ্রিন টিভি, যার মালিকায় আছেন গোলাম দস্তগীর; সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলামের সুপারিশ করা তিতাস টিভি; সাংসদ ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের সুপারিশ করা মিলেনিয়াম টিভি, যার ব্যবস্থাপনায় আছেন নুর মোহাম্মদ; এটিভি, যার মালিক হলেন আলোচিত বেদের মেয়ে জোছনা সিনেমার প্রযোজক বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ির আব্বাস উল্লাহ শিকদার; বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া লিমিটেডের নিউজ টোয়েন্টিফোর; আলোচিত বিএসবি ফাউন্ডেশনের ক্যামব্রিয়ান টিভি চ্যানেল, এটি হবে শিক্ষা চ্যানেল, যার চেয়ারম্যান হলেন এম কে বাশার; ব্যবসায়িক নেতা আনিসুল হকের মালিকাধানীন জাদু মিডিয়া লিমিটেডের জাদু টিভি; মিডিয়া বাংলাদেশ লিমিটেডের আমার গান, যার চেয়ারম্যান হলেন তরুণ দে এবং ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের চ্যানেল টোয়েন্টি ওয়ান, এর সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক দল জাসদের লোকজন জড়িত।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, সুপারিশ করা নেতারাই মূলত এসব টিভির সঙ্গে জড়িত। কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বিষয়টি স্বীকারও করেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রংধনু টিভির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন। সাংসদ শাহরিয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি রেনেসাঁ নামে একটি শিশুতোষ চ্যানেলের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু অনুমোদন হয়েছে কি না এখনো জানি না।’

কয়েক দিন আগে বাংলা টিভি (বাংলা টিভি লিমিটেড) নামে নতুন আরেকটি চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। এই চ্যানেলের মালিক সামাদুল হক। তিনি লল্ডনে বাংলা টিভি নামে একটি চ্যানেলের কর্ণধার। এরও কিছুদিন আগে গত ১ অক্টোবর অনুমোদন পায় চ্যানেল ৫২ (বায়ান্ন) নামে আরেকটি টিভি চ্যানেল। আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আবদুল মালেক উকিলের ছেলে বাহারউদ্দিনের স্ত্রীর নামে দেওয়া হয় এই টেলিভিশনের লাইসেন্স। এর সঙ্গে রয়েছে বেঙ্গল গ্রুপ। আরটিভিতে বেঙ্গল গ্রুপের মালিকানা রয়েছে।

রেডিও: তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে ১৪টি এফএম রেডিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো: শিলা ইসলামের রেডিও মাসালা, মোসাব্বির আহমাদের রেডিও নেকস্ট, আ ক ম সাহিদ রেজার বাংলা রেডিও, অঞ্জন চৌধুরীর (স্কয়ার) রেডিও দিনরাত, আহসান খান চৌধুরীর জাগো এফএম, নাট্যব্যক্তিত্ব নাদের চৌধুরীর দেশ রেডিও, রাশেদুল হোসেন চৌধুরীর রেডিও ধ্বনি, সৈয়দ জহিরুল ইসলামের রেডিও সিআইইউএস, কাজী মাহফুজুর রহমানের রেডিও সিটি, নাট্যব্যক্তিত্ব শমী কায়সারের রেডিও অ্যাকটিভ, শাফকাত সামিউর রহমানের রেডিও এজ, আবদুল্লাহ আল মামুনের টাইমস রেডিও, সাংসদ শাহরিয়ার আলমের রেডিও ঢোল এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানের রেডিও ক্যাপিটাল।