
শোক ও শ্রদ্ধায় জাতীয় শোক দিবস পালিত হলো কলকাতায়। এ উপলক্ষে কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রোববার সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার ৮ স্মিথ লেনের সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। মাল্যদান করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসানসহ উপহাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। একই সঙ্গে বেকার হোস্টেলের এই স্মৃতিবাহী কক্ষের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যেও মাল্যদান করা হয়। কলকাতার সোনালী ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশসহ কলকাতার কয়েকটি সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মাল্যদান করা হয় এদিন বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে।
এরপর এখানে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতের পর উপস্থিত অতিথিরা ঘুরে দেখেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকক্ষ।
এর আগে সকালে কলকাতা উপহাইকমিশনে অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এ সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এরপর উপহাইকমিশন চত্বরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সূচনা করেন উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান।
সকাল ১০টায় দুস্থ ও অনাথ শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। দুপুরে উপহাইকমিশনের মসজিদে আয়োজন করা হয় মিলাদ মাহফিলের।
বেলা তিনটায় উপহাইকমিশনের বাংলাদেশ গ্যালারিতে আয়োজন করা হয় বিশেষ আলোচনা সভার। আলোচনা সভায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ শুভ রঞ্জন দাশগুপ্ত, সাংবাদিক মানস ঘোষসহ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পশ্চিমবঙ্গের কৃষিমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, বিশেষ অতিথি রাজ্যের অগ্নিনির্বাপণ প্রতিমন্ত্রী সুজিৎ বসু। সভাপতিত্ব করেন উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান। আলোচনা সভার শুরুর আগে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
আলোচকেরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁরা বলেন, এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের জন্ম না হলে আজ বিশ্বের বুকে বাঙালিদের জন্য একটি নিজস্ব স্বাধীন ভূমির জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতির পিতা। বাংলাদেশের স্থপতি। তাঁর অবদান টিকে থাকবে যত দিন বাংলাদেশ থাকবে।
১৯১০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই বেকার হোস্টেল। এটি সরকারি ছাত্রাবাস।
বঙ্গবন্ধু কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ডিগ্রিতে পড়ার সময় এই বেকার হোস্টেলে ছিলেন ১৯৪২-৪৭ সাল পর্যন্ত। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে তিনি ১৯৪২ সালে ভর্তি হয়েছিলেন এই ইসলামিয়া কলেজে। ছিলেন ২৪ নম্বর কক্ষে। সেদিনকার এই ইসলামিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন করে এখন নামকরণ করা হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে গড়া হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ। এই স্মৃতিকক্ষে এখনো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল ও আলমারি।