Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারি স্থাপনায় এডিস থাকলেও অভিযান নেই

ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনের মালিকদের জরিমানা করছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ক্ষেত্রবিশেষে কারাদণ্ডও দিয়েছেন আদালত। জুলাই থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ভবনমালিকদের প্রায় ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে সরকারি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা থাকলেও সেখানে কোনো অভিযান নেই।

সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সর্বশেষ মশা জরিপে সরকারি দুটি হাসপাতাল, মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকা, পাঁচটি বাস টার্মিনাল ও ডিপোতে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা যাতে না জন্মাতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে কত দিনের মধ্যে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, চিঠিতে উল্লেখ নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ ভুপেন্দর নাগপাল সম্প্রতি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, নির্মাণাধীন ভবন বা অবকাঠামোর মশা নিধন করা সম্ভব হলে ঢাকার ডেঙ্গু ৪০ শতাংশ কমে যাবে।

অভিযানের সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা দেখতে পান, নির্মাণাধীন ভবনের ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণাগার (রিজার্ভার), ফেলা রাখা পাত্র, রঙের কৌটা, পাইপে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। অনেক বাড়ির ছাদের পরিবেশ ছিল নোংরা। সেখানে পানি জমে থাকা মাটি ও প্লাস্টিকের পাত্র, বালতি, ড্রাম, অব্যবহৃত টায়ার ও ককশিট, আগাছার জঙ্গল, পরিত্যক্ত খোলা টিন, কমোড ইত্যাদি পাওয়া যায়। এসব কারণে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি লার্ভিসাইড কীটনাশক দিয়ে লার্ভাগুলো ধ্বংস করা হয়।

রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত জুলাই থেকে বাসাবাড়িতে অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৭৪৮ বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সহস্রাধিক বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এসব বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং একজনকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, এমন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ দায়িত্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনের পাশাপাশি সরকারি ভবনেও অভিযান চালানো হচ্ছে দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন একটি এলাকায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে।

গত ২৪ জুলাই থেকে মশার লার্ভার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিএনসিসি ১ হাজার ৪০৬টি বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে। মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৩৯টি বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ডিএনসিসির জরিমানার অর্ধেকের বেশি করেছেন সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইনে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আলাদা করে কিছু বলা নেই। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও অবস্থার উন্নতি না হলে অবশ্যই সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ব্যবস্থা নেবে।

গত ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ঢাকার ১৪টি এলাকায় মশার জরিপ করে। এর মধ্যে ১২টি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে লার্ভা পাওয়া যায়। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা এসব এলাকার বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা করে দেখে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কমলাপুর বিআরটিসি বাস ডিপো, কমলাপুর রেলওয়ে কলোনি, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও শাহজাহানপুর বস্তিতে ৮০ শতাংশের বেশি পাত্রে লার্ভা পাওয়া যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর ১২-এর বিআরটিসি বাস ডিপোতে এডিস মশার ঝুঁকিও একই পর্যায়ে। একটি এলাকায় ২০ শতাংশের বেশি পাত্রে লার্ভা পাওয়া গেলে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। জরিপের ফলাফল জানিয়ে দুই সিটি করপোরেশনকে চিঠিও দিয়েছে রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা।

গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনাল, মেট্রোরেল প্রকল্পের আগারগাঁও অংশ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনালের পেছনের অংশে টায়ার, তেলের ড্রাম, প্লাস্টিকের বোতল পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের আগারগাঁও অংশে পাইলিংয়ের জন্য খুঁড়ে রাখা গর্ত, লোহার পাতে স্বচ্ছ পানি জমে থাকতে দেখা যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশ ফটকের পাশে, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের পাশের জায়গায় প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, ককশিট পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের ভেতরে নিচতলার পর্যবেক্ষণ (অবজারভেশন) কক্ষের পেছনে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পানি জমার জন্য দুটি পাত্র রাখা হয়েছে। হলুদ ও লাল রঙের দুই পাত্রেই স্বচ্ছ পানি জমে আছে।

মশার লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সম্পর্কে জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন এবং মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনে অভিযান চালাচ্ছে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানকে শুধু চিঠি দিয়েই সিটি করপোরেশনের কাজ শেষ হয়ে যায় না। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা নজরদারিতে রাখতে হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।