সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি ১৬ হাজার ৬৭ জন, মারা যায় ২৭৫

দেশের সরকারি হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ১৬ হাজার ৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে দৈনিক ২৭৫ জন মারা যায়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মৃত্যুহার ১ দশমিক ৭। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘হেলথ বুলেটিন ২০১৫’-এর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

বার্ষিক এই প্রতিবেদনে প্রাথমিক, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের হাসপাতালে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণ বা রোগের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায়, হাসপাতালে যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের অধিকাংশ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। ৩১ ডিসেম্বর এই বুলেটিন প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটি তৈরি করেছে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)।
এমআইএস ২০১৪ সালে দেশের ৪০৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৬৪টি জেলা ও সদর হাসপাতাল, ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৮টি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং একটি হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর তথ্য বুলেটিনে তুলে ধরেছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই বছর ৪৯৫টি হাসপাতালে ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭০৭ জন রোগী ভর্তি হয়। একই বছর হাসপাতালগুলোতে ১ লাখ ২৬৮ জন রোগী মারা যায়।
এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে ভর্তি ও মৃত্যুর কারণ হাসপাতালগুলো সঠিকভাবে পাঠায়নি। ৫১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭০ রোগীর সঠিক রোগ ও ৯৯ হাজার ৭৩০টি মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা গেছে।
মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, তৃতীয় স্তরের হাসপাতালে মৃত্যুহার বেশি, কারণ এসব হাসপাতালে জটিল রোগী বেশি আসে। উপজেলা, জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলো আলাদা। উপজেলা হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত রোগে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে ইনফ্লুয়েঞ্জা-নিউমোনিয়ায় ও হৃদ্রোগ। জেলা হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় শ্বাসতন্ত্র ও হৃদ্যন্ত্রের জটিলতায় ভোগা শিশুদের। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে স্নায়বিক ও হৃদ্রোগে মৃত্যু। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তালিকার শীর্ষে স্নায়বিক রোগে মৃত্যু। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে সড়ক দুর্ঘটনায় ও জন্মকালীন শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় মৃত্যু।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই তিন স্তরের হাসপাতালের মৃত্যুর কারণ হিসেবে শীর্ষ ১০টি রোগের তালিকা পৃথকভাবে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায়, দীর্ঘস্থায়ী ও অসংক্রামক রোগেই বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে বাড়ি নেওয়ার একটা সংস্কৃতি এ দেশে আছে। সেই কারণেই হয়তো জাতীয় ক্যানসার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে তুলনামূলকভাবে মৃত্যুর হার কম।
পরিসংখ্যান বলছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১ দশমিক ৭ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হাসপাতালেই হয়। বাকি ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশের ব্যাপারে রোগ সরকারের তত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, এদের বড় অংশটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। অন্য একটি অংশের চিকিৎসা বাড়িতে গিয়ে চলতে থাকে। ক্ষুদ্র একটি অংশ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়।