Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারের পক্ষে লবিস্ট কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে

মার্কিন বিচার দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আগে থেকেই সরকারের পক্ষে একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

মার্কিন প্রশাসন, নীতিনির্ধারক, মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছে। এদের মধ্যে অন্তত আট বছর ধরে কাজ করছে ওয়াশিংটনভিত্তিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরেও র‍্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগসহ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা প্রচার করেছে। গত ডিসেম্বরে মার্কিন বিচার বিভাগে জমা হওয়া নথি পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর সরকার ও সরকারি দলের কেউ কেউ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনেও সরকারবিরোধীদের লবিস্ট কাজ করেছে, এমন একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে।

সর্বশেষ ৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার পেছনে একটি ‘পিআর এজেন্সি’ কাজ করেছে বলে মনে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও ‘লবিস্ট’ নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করে। কিন্তু মার্কিন বিচার দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খানের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত বার্তার জবাব দেননি। আর গতকাল রাতে মুঠোফোনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষায় প্রচার ও সমর্থন আদায়ের কাজটি করে থাকে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ দেশটির রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারক মহলে প্রতিষ্ঠানগুলো যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে।

মার্কিন আইন ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের (ফারা) আওতায় লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ছয় মাসে তাদের কার্যক্রমের বিবরণ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তরে জমা দিতে হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা কোনো চাঁদা দিয়ে থাকলে তার বিবরণ জমা দিতে হয়। এসব বিবরণ বিচার দপ্তর নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে।

সরকারের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান

বিজিআর গত বছর বাংলাদেশের জন্য মূলত মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ও গণমাধ্যমের কাছে সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরার কাজটি করেছে। বিজিআরের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে দেখা যায়, গত বছর তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে পেয়েছে, বছরের যার পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার (আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা)।

এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে তিন লাখ ডলার ফি দেওয়ার শর্তে নিয়োগ করেছে বলে খবর বেরিয়েছিল (কালের কণ্ঠ, ২৮ জুলাই ২০১৯)। মূলত বিজিআর ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে আসছে। (লবিংয়ে কেউ কম যান না, প্রথম আলো, ২৭ নভেম্বর ২০১৮)।

বিজিআর ছাড়াও গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডল্যান্ডার গ্রুপের সঙ্গে এক মাসের জন্য একটি চুক্তি করেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। এ চুক্তির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক আয়োজন ও সফর বিনিময়। এক মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার পেয়েছে ফ্রিডল্যান্ডার। এ ছাড়া কোনওয়াগো কনসালটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ২৬ জুলাই থেকে ২৬ আগস্ট—এই এক মাসের জন্য আরেকটি চুক্তি করে। ৩৫ হাজার ডলার অগ্রিম দেওয়ার শর্তে চুক্তিটি হয়, যাতে সই করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কোনওয়াগোর সেবার মধ্যে সুনির্দিষ্ট করা ছিল মার্কিন সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা। উল্লেখ্য, অলাভজনক ও অরাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিইআইর বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।

মার্কিন সিনেটরদের প্রস্তাব অনুযায়ী গত বছরের ২৬ জুন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের প্রতিবেদনে র‍্যাবের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেই প্রতিবেদনের একটি জবাব দেওয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই বিজিআরের জনসংযোগবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অ্যালেক্স এলিস ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষে দূতাবাসের উপপ্রধান ফেরদৌসি শাহরিয়ারের স্বাক্ষরিত জবাব এইচআরডব্লিউর প্রধান নির্বাহী কেনেথ রথ ও সংস্থাটির আরেকজন কর্মকর্তা জন সিফটনের কাছে ই–মেইল করেছেন।

‘বাংলাদেশ: হোল্ড সিকিউরিটি ফোর্সেস অ্যাকাউন্টেবল ফর টর্চার’ নামে এইচআরডব্লিউর ওই প্রতিবেদনে র‍্যাবের বিরুদ্ধে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগ আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সিনেটররা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগনেটস্কি অ্যাক্টের আওতায় র‌্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, প্রতিবেদনে তা উল্লেখের পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট ও জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার নির্যাতনবিরোধী কমিটির পর্যবেক্ষণ উদ্ধৃত করা হয়েছিল।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে মারা যান। এ ঘটনায় ১৩টি দেশের কূটনীতিক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমের প্রতি এ ধরনের উপদ্রব প্রচার না করতে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা–ও এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ফেরদৌসি শাহরিয়ার তাঁর জবাবে লেখক মুশতাক আহমেদকে নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে লেখেন, হেফাজতে যেকোনো মৃত্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় সরকার। র‍্যাবের যেসব সাফল্যের কথা সরকারের পক্ষ থেকে সব সময়ে বলা হয়, সেগুলো ওই জবাবে তুলে ধরা হয়। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিচার এবং পুলিশের বিভিন্ন অভিযোগের নিজস্ব তদন্ত প্রক্রিয়ার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) ‘ইউএন আর্জড টু প্রোব অ্যালেজড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত বছর ১৮ আগস্ট বিজিআরের কর্মকর্তা অ্যালেক্স এলিস বার্তা সংস্থাটির দুটি ই–মেইলে এবং এপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলহাস আলমের কাছেও ওই প্রতিবেদনের জবাব পাঠায়। ওই চিঠিও ফেরদৌসি শাহরিয়ারের লেখা, যাতে এইচআরডব্লিউর সূত্রগুলোকে প্রশ্নবোধক অভিহিত করে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মত দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এইচআরডব্লিউ মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের জোগান দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে, যারা বিশ্বাসযোগ্য নয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, এইচআরডব্লিউর মতো বেসরকারি সংস্থা অশ্বেতাঙ্গ এবং এখনো ধনী নয়, এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে এ ধরনের অপ্রমাণিত অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে আসছে।

এক দিন পরই ১৯ আগস্ট একই পন্থায় এইচআরডব্লিউর কেনেথ রথ ও জন সিফটনের কাছে পাঠানো আরেকটি ই–মেইলে ফেরদৌসি শাহরিয়ার সংস্থাটির ‘হয়্যার নো সান কেন এন্টার: আ ডেকেড অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার জবাব দেন। ওই প্রতিবেদনে পরিচয় প্রকাশ না করা ৬০ জনের সাক্ষাৎকার, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৮১টি ঘটনার উল্লেখ এবং বেনামি সাতজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে জবাবে বলা হয়, এগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৩৫ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার দাবি সম্পর্কে বলা হয় যে তারা যে অন্য অপরাধীদের দ্বারা অপহৃত হয়নি, তা সংস্থাটি কীভাবে নিশ্চিত হয়েছে? আগের মতোই এই চিঠিতেও সংস্থাটির বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ পুনরাবৃত্তির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এ ধরনের গোঁড়ামি ত্যাগ করা উচিত।

দ্য ডিপ্লোম্যাট ওয়েবসাইটে ১৮ আগস্ট প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ‘ফেক নিউজ’ ল ইজ ইউজড টু স্টাইফেল ডিসেন্ট শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এরপর ২৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) শাহ আলম (খোকন) এ বিষয়ে ওয়েবসাইটটির প্রধান সম্পাদক শ্যানন তিয়েজিকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে কোভিড মোকাবিলায় সরকারি কার্যক্রমের বিপরীতে বিভ্রান্তি ও সংশয় ছড়ানোর জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহারের সমস্যা তুলে ধরে লেখক মুশতাক আহমেদের গ্রেপ্তারের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয় এবং হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

২৯ নভেম্বরে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কাউন্সেলর দেওয়ান আলী আশরাফ আল-জাজিরাকে চিঠি দিয়ে খালেদা জিয়ার মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিহিত করাকে ভুল বলে ব্যাখ্যা দেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার, আল-জাজিরার এই বক্তব্যেরও প্রতিবাদ জানানো হয়।

গত বছর প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সম্পর্কে বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনেরও জবাব দেয় বাংলাদেশ। ২০ মে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেরদৌসি শাহরিয়ারের চিঠি এপি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আরও অন্তত এক ডজন পত্রিকায় পাঠায় বিজিআর। ওই সব পত্রিকা এপির ‘বাংলাদেশ অ্যারেস্টস জার্নালিস্ট নোন ফর আনআর্থিং গ্রাফট’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল। দূতাবাসের চিঠিতে ওই প্রতিবেদনে ঘটনাটি ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এ ছাড়া বিজিআর বছরের বিভিন্ন সময়ে সরকারের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সামাজিক সূচকগুলোয় উন্নতি, ডিজিটাল কার্যক্রমের সাফল্য নিয়ে বিভিন্ন সরকারি বক্তব্য প্রচারের বিবরণও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তরে পেশ করেছে।

বিএনপি ও জামায়াতের লবিস্ট

বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে সাম্প্রতিকতম লবিংয়ের যেসব বিবরণ পাওয়া গেছে, তা মূলত ২০১৯ সালের। বিএনপিও একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়েছিল। দলটির প্রধান লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ছিল ব্লু স্টার এবং সাব-কন্ট্রাক্টর রাস্কি পার্টনার্স। মার্কিন বিচার দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের জন্য দলটির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের চিঠি দিয়েছেন। দলটির নেতা–কর্মীদের নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ করা হলেও ওই সব চিঠিতে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নেই। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কয়েকটি বৈঠকের কথাও এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

ব্লু স্টার ও রাস্কি পার্টনার্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত বিএনপির কাছে তারা ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৯ ডলার দাবি করেছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯০ ডলার তারা পেয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে বেনামি লবিং করার জন্য পরিচিত একটি সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে হাশ ব্ল্যাকওয়েল স্ট্র্যাটেজিস নামের প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়েছে। তাদেরও ২০১৯ সালের পরের কোনো কার্যক্রমের বিবরণ পাওয়া যায়নি।

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে লবিং স্বীকৃত রাজনৈতিক হাতিয়ার হলেও এ বিষয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্নে একধরনের মতৈক্য গড়ে উঠছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা ওইসিডির সদস্য ১৪টি দেশ ইতিমধ্যেই লবিংয়ে স্বচ্ছতার বিষয়ে আইন তৈরি করেছে এবং আরও অনেকে আইন তৈরির পথে এগোচ্ছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে এ বিষয়ে যত আইন হয়েছে, তা আগের ৬০ বছরেও হয়নি। ফলে লবিংয়ে গোপনীয়তার যুগের ইতি ঘটতে চলেছে এবং সরকার অথবা বিভিন্ন গোষ্ঠীর কার্যক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া এখন অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে।