সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৩৯টি প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তদন্তে। আইএমইডি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে এসব প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অনিয়ম সম্পর্কে সুপারিশ করেছে এবং এ বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের জানাতে বলেছে।
কিন্তু ১৪টি প্রকল্প সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আইএমইডিকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। এমনকি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজে চিঠি দিয়েও মন্ত্রণালয়গুলোর কাছ থেকে কোনো জবাব পাননি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভবনে কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রণালয়গুলো আইএমইডির চিঠির পাওয়ার পর কোনো সাড়া না দেওয়ার কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। কমিটি প্রকল্প বাস্তবায়নসম্পর্কিত জবাবদিহি আদায়ের ক্ষমতা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বলছেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাস হলেও তাঁদের কাছে জবাবদিহি আদায়ের ক্ষমতা না থাকায় কাজ ভালো হচ্ছে না। আইএমইডি কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় মন্ত্রণালয়গুলো তাঁদের সুপারিশ আমলে নেয় না। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিকবার আলোচনা করেও কোনো ফল হয়নি।
বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাতিলের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর। বর্তমানে ৪০-৪২টি প্রকল্প বাতিলের তালিকায় আছে। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর গোচরে আনা হয়েছে। তিনি প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে পরিকল্পনামন্ত্রীর মোবাইলে ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কোন প্রকল্পের কাজ কত ভাগ শেষ হয়েছে, কতটি প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে এবং কতটি মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে, সে সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের কাছে হালনাগাদ তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা জানতে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠকে আইএমইডি থেকে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের ৫৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ৭০৫টি চলমান প্রকল্প পরিদর্শন করা হয়েছে। ৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে ৩৯টি প্রকল্পের অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে আইএমইডিকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ১৪টি প্রকল্প সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কোনো জবাব দেয়নি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক বছর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে পরিবেশবান্ধব করতে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের সুপারিশ করে মোট আট দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি আইএমইডিকে কিছুই জানায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক প্রকল্প ভেড়ামারা কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের বিষয়ে সাত দফা সুপারিশ করে কোনো জবাব পায়নি আইএমইডি।
রেল বিভাগের ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ের লাকসাম-চাঁদপুর সেকশনের প্রকল্পে নিম্নমানের ব্যালাস্ট (ছোট পাথর) বাতিল ও নিম্নমানের ইট পরিবর্তনসহ করা সাত দফা সুপারিশ করেছিল আইএমইডি। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। সেখানে যে ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের ৫৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রামীণ সড়ক ও হাটবাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, ৩৬ কোটি টাকার জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়নকেন্দ্র স্থাপন এবং ১৯০ কোটি টাকার ঢাকা আরবান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে আইএমইডি সুপারিশ করে কোনো জবাব পায়নি। এসব প্রকল্পে নিম্নমানের ইট, পাথর, বালি ও বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে রিকাবীবাজার-রামপাল-দিঘীরপাড়-বাংলাবাজার-মুন্সিগঞ্জ সদর-নয়াগাঁও-মুক্তারপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ২২৪ কোটি টাকার গাজীপুর-আজমতপুর-ইটখোলা সড়ক নির্মাণ, ২০ কোটি টাকার টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।