এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী: জোরালো বৈশ্বিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ

সর্বসম্মতভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য গৃহীত

নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার তুলে দেন আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব হুলিন ঝাও l ছবি: ফোকাস বাংলা
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার তুলে দেন আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব হুলিন ঝাও l ছবি: ফোকাস বাংলা

২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করাসহ উন্নয়নকে টেকসই করতে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্র সর্বসম্মতভাবে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বা এসডিজি গ্রহণ করেছে।
গত শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে এই এসডিজি গৃহীত হয়। ১৭টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী ১৫ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে এই এসডিজিতে। আগামী বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হবে লক্ষ্য পূরণের এই অভিযাত্রা।
শনিবার নিউইয়র্কে শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, বিশ্বের সব মানুষের জন্য নেতারা নতুন এই লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকার করেছেন। আরও উন্নত পৃথিবীর জন্য এটি এক সর্বজনীন, সমন্বিত ও রূপান্তরিত স্বপ্ন।
সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে জোরালো বৈশ্বিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, এসডিজি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতৃত্ব সর্বসম্মতভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক চুক্তির ক্ষেত্রে তেমনই অঙ্গীকার দেখতে চায় বাংলাদেশ। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের উন্নয়নের অনেক মূল্যবান অর্জনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। গতকাল রোববার নিউইয়র্কে শীর্ষ সম্মেলনের পঞ্চম কর্ম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন।
এর আগে গত শনিবার এসডিজি গ্রহণের অধিবেশনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লাখস লুকে খাসমুসেন ও উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োএরি কাগুতা মুসেভেনি। তাঁরা দুজনই এমডিজির সাফল্য এবং নতুন উন্নয়ন লক্ষ্য পুরোপুরি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। তবে সম্মেলনে সাধারণ পরিষদের সভাপতি মোনস্ লুকেটফট্ দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মতো অসমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এসডিজিকে ‘উচ্চাভিলাষী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এসডিজির ১৭ লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব, সুস্বাস্থ্য, উন্নত শিক্ষা, নারী-পুরুষ সমতা, বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন, সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, উন্নত কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অসমতা বিলোপ, টেকসই শহর ও সমাজ, দায়িত্বশীল উৎপাদন ও ব্যবহার, জলবায়ুর জন্য পদক্ষেপ, শান্তি, ন্যায়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং লক্ষ্য অর্জনে অংশীদারত্ব।
জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) সাফল্যের ধারাবাহিকতায় নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০০০ সালে গৃহীত এমডিজিতে বিশ্বের ৭০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত হতে সাহায্য করেছে। এমডিজির আটটি লক্ষ্য পূরণে ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্য কমানোর পাশাপাশি ক্ষুধা, রোগ নিবারণ, লিঙ্গবৈষম্য বিলোপ ও পানি ও পয়োনিষ্কাশনে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা: এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনের কর্ম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতে টেকসই উন্নয়নের জন্য উচ্চাভিলাষী ও বৈশ্বিক কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সরকার, নাগরিক সমাজ ও জাতিসংঘকে অভিনন্দন জানান। তিনি এমডিজি পূরণের জন্য ২০০০ সালে মিলেনিয়াম ঘোষণায় যোগ দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। গত ১৫ বছরে এমডিজি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সম্পদ ও জনবলকে কাজে লাগিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজির সময়সীমা যখন শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, সে সময়টাতে এসে দারিদ্র্য বিমোচন, শিশু মৃত্যু ও সংক্রামক ব্যাধির হার কমানোসহ এর অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জন করতে পারাটা বাংলাদেশের জন্য আনন্দদায়ক। এমডিজির বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে সহায়তা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমডিজির অভিজ্ঞতার পর বিশ্ব সম্প্রদায় যে অনেক বেশি জনমুখী ও একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত এমন একটি অভীষ্ট লক্ষ্য গ্রহণ করেছে, সেটি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ করছি। তবে এগুলোর পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে। আমাদের আর্থসামাজিক ও পরিবেশের ঝুঁকিগুলো যেমন একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো নিয়ে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, নানা রকম চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার পরও এমডিজিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি অর্জন করেছে। এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে জোরালো বৈশ্বিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নের বিভিন্ন স্তর, সামর্থ্য ও জাতীয় পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে আলোচ্যসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা ও অগ্রাধিকার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, অগ্রগতিকে টেকসই করা এবং সত্যিকারের পরিবর্তনের স্বার্থে আলোচ্যসূচির সব স্তরেই অসমতা দূর করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অভিন্ন এই যাত্রায় এসডিজির প্রতিটি লক্ষ্য বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অর্থায়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি, সামর্থ্য বাড়ানো ও ঋণ—সব ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। বিশ্ব বাণিজ্য ও আর্থিক ব্যবস্থা এবং প্রতিষ্ঠানে আমাদের অবশ্যই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জটিলতাকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি বৈশ্বিক চুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লক্ষ্য ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন দেখার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের উন্নয়নের অনেক মূল্যবান অর্জনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। এসডিজি ও নতুন জলবায়ু চুক্তি যাতে অভিন্ন লক্ষ্যে ভূমিকা রাখতে পারে, সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’