সময়ের মুখ

সাইকেল চালাতে চাই ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত

দ্রাবিড় আলম, তানভীর আহমেদ, রাকিবুল ইসলাম ও মো. আলাউদ্দিন—এই চারজন মিলে সম্প্রতি রিলে করে ৪৮ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছেন। সহযোগিতায় ছিল প্রথমআলোডটকম। এই বিশ্ব রেকর্ডের মূল অনুপ্রেরণা দ্রাবিড় আলমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবুল হাসনাত

দ্রাবিড় আলম
দ্রাবিড় আলম
প্রশ্ন

প্রথম আলো: কী করছেন?

দ্রাবিড়: অফিসে কাজ করছি। আমার অফিস ঢাকার মহাখালীতে। এটা একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আজ (গত বৃহস্পতিবার) সাইকেল চালিয়েছেন?

দ্রাবিড়: না, আজ চালাইনি। কারণ, আজ ব্যায়ামের শিডিউল (নির্ধারিত সময়সূচি) ছিল। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ব্যায়াম করেছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: নিয়মিত সাইকেল চালান, এতে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কাজে বিঘ্ন ঘটে না?

দ্রাবিড়: নাহ্‌, কোনো বিঘ্ন ঘটে না। কারণ, আমি ক্যালেন্ডার মেনে চলি। অনলাইন ক্যালেন্ডারে আমার রোজকার খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজকর্মের একটা ছক তৈরি করা আছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: করেন ব্যবসা, চালান সাইকেল। লোকে কী বলে?

দ্রাবিড়: শুরুতে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাত। এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। চেনা-জানা অনেকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সাইকেল চালিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার চিন্তা কোথা থেকে এল?

দ্রাবিড়: করোনা ঠেকাতে লকডাউন শুরুর পর দেশি-বিদেশি সব প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে যায়। আমাদের রোজকার প্রশিক্ষণের জন্য একটা লক্ষ্য লাগে, প্রেরণা লাগে। সেটা আমরা পাচ্ছিলাম না। বাইরে থেকে যখন পাচ্ছিলাম না, তখন বিশ্ব রেকর্ড গড়ার এই লক্ষ্য নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছিলাম।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কোন মিলিত মন্ত্র সাফল্য এনে দিল?

দ্রাবিড়: আমাদের সাইক্লিং দল টিমবিডিসির একটা মোটো আছে, সেটা হলো ‘শাটআপ লেগস’। বিষয়টি হলো ভালো সাইকেল চালাতে হলে পায়ের কথা নয়, মাথার কথা শুনতে হবে। যতই ক্লান্ত হই না কেন, যতক্ষণ মাথার কথা শুনব, ততক্ষণ শরীর আমার কথামতো চলতে বাধ্য হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কত দিনের প্রস্তুতিতে এই সাফল্য?

দ্রাবিড়: ১৮ মাসের চেষ্টা ছিল। তবে রেকর্ডের জন্য রাইডারদের প্রস্তুত হতে ৯ মাস লেগেছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: টানা দুই দিন সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা কেমন?

দ্রাবিড়: পরিশ্রম অনেক। প্রতিবার সাইকেলে ওঠার সময় অনিচ্ছা দেখা দিত। কিন্তু আগেরজনকে দেখে পরের জন উদ্বুদ্ধ হয়েছে। রাইডের শেষের দিকে এসে আমার ঘাড় বাঁকা হয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিশ্ব রেকর্ডের লক্ষ্য নিয়ে সাইকেলে চড়ার আগমুহূর্তে কার কথা মনে পড়েছিল?

দ্রাবিড়: পরিবারের কথা। আমার ছেলে, স্ত্রীর কথা। রাইড শেষ করার আগমুহূর্তে ওরা পূর্বাচলে এসেছিল, যেখানে আমরা টানা ৪৮ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়েছিলাম। ওদের দেখে নিজের অজান্তে সাইকেলের গতি বেড়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনার অনুপ্রেরণা কে?

দ্রাবিড়: ৭০ বছর বয়সী এক জাপানি সাইক্লিস্ট। পাঁচ বছর আগে থাইল্যান্ডে পাহাড়ি এলাকায় এক রেসে তাঁর সঙ্গে দেখা। আমি তখন খুব ক্লান্ত। আমাকে খানিক উৎসাহ দিলেন। পরে ওনার সঙ্গে চালাতে বললেন। আমার বয়স তখন ৩৫। কিন্তু ওই সাইক্লিস্টের সঙ্গে পেরে উঠলাম না। সেদিনই ঠিক করলাম, আমার বয়স যখন ৭০ হবে, তখন এ রকম ৩৫ বছর বয়সী কাউকে পেছনে ফেলে পাহাড়ি রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাব।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: পছন্দের খাবার কী? খুব কি নিয়ম মেনে চলেন?

দ্রাবিড়: পুরান ঢাকার বাকরখানি। আমার পছন্দের একটা দোকান আছে। সেখান থেকে প্রায়ই অর্ডার (ফরমাশ) দিয়ে নিয়ে আসি। নিয়মের বিষয়ে আগেই বলেছি, আমার কাজের একটা রুটিন ঠিক করা আছে। সপ্তাহে ছয় দিন সাইকেল চালাই, এক দিন ছুটি। দুই দিন ব্যায়াম করি। এক দিন সাঁতার কাটি এক থেকে দুই ঘণ্টা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কথায় আছে, চল্লিশ পেরোলেই চালশে। আপনার বয়স ৪০ বছর। আর কতটা পথ যেতে চান?

দ্রাবিড়: কমপক্ষে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সাইকেল চালাতে চাই। ওই যে বললাম, পাহাড়ি রাস্তায় ৩৫ বছর বয়সী কাউকে পেছনে ফেলে চলে যেতে চাই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: তরুণদের ফিটনেস নিয়ে কোনো পরামর্শ?

দ্রাবিড়: সবকিছু খাওয়া যাবে, কিন্তু পরিমাণমতো। প্রতিদিন কিছু না কিছু করা—এই যেমন হাঁটা, দৌড়ানো। আর রাতের খাবার অবশ্যই নয়টার মধ্যে সেরে ফেলা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশে সাইক্লিংয়ের ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন?

দ্রাবিড়: আমরা প্রতিযোগিতামূলক সাইক্লিংয়ে বড় জায়গায় যেতে পারিনি। প্রথমত, এশিয়ায় ভালো করতে হবে। পরে নিজেদের নিয়ে যেতে হবে বিশ্ব সাইক্লিংয়ের আসরে। আমরা যেন বলতে পারি, বাংলাদেশ কিন্তু সাইক্লিং করে।