
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন পায়ে পায়ে আবর্জনার স্তূপ। উদ্যানের বড় অংশজুড়ে ভবঘুরেদের সংসার। শুকনো পাতা আর পলিথিনে ছেয়ে আছে সবুজ ঘাসের মাঠ।
একাত্তরের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে এসেছিল যুদ্ধের প্রস্তুতির ঘোষণা। ১৬ ডিসেম্বর এই উদ্যানেই বিজয়ের দলিল সই হয়। স্বাধীনতাস্তম্ভ, স্বাধীনতা জাদুঘর, শিখা চিরন্তনের অবস্থান এই প্রাঙ্গণে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যানটির পরিবেশ নোংরা, অস্বাস্থ্যকর।
গতকাল গিয়ে দেখা যায়, টিএসসি-সংলগ্ন প্রবেশ গেটে পলিথিন, কাগজ, সিগারেটের প্যাকেট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। গেটের ওপরের চওড়া অংশে ভবঘুরে কিশোরদের আবাস। তাদের বিছানা-বালিশ পাতা। চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশে, ছবির হাট লাগোয়া প্রবেশ গেটটিও আবর্জনার দখলে।
উদ্যানে ঢোকার গেটগুলোতে চা-সিগারেট-ভাতের অস্থায়ী দোকান চোখে পড়ে। ভেতরে বড় গাছগুলোর গুঁড়ি ঘিরে ছোট-বড় ভাগাড়। ডাবের খোল, প্লাস্টিকের প্যাকেট, আখের ছোবড়া, ব্যবহৃত প্যাকেট, লেবু, আইসক্রিমের কাপসহ নানা আবর্জনার ঢিবি। আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফি আহমেদ বলেন, বাইরের ভাসমান দোকানগুলো তাদের আবর্জনা এনে ভেতরে ফেলে। এভাবে পরিবেশ আরও নষ্ট হচ্ছে। বেড়ানোর পরিবেশ আর নেই।
শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত উদ্যানের প্রাচীর ঘেঁষে শখানেক ছিন্নমূল পরিবারের বাস। গাছগুলোতে দড়ি বেঁধে কাঁথা-চাদর শুকাতে দেওয়া হয়েছে। গাছের ডাল আর ঝরে পড়া শুকনো পাতা দিয়ে রান্না করতে দেখা যায় অনেককে। তাদের একজন আয়েশা খাতুন বলেন, ছয় বছর ধরে ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে থাকছেন। উদ্যানে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সরে যেতে হয়। এ ছাড়া কোনো সমস্যা বা বাধা আসেনি।
গতকাল গিয়ে বইমেলার স্টলের বেশ কিছু বাঁশের স্তূপ এখনো পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্বাধীনতাস্তম্ভের সামনে বড় গর্তটিও ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। স্বাধীনতাস্তম্ভের আশপাশের আবর্জনা পরিষ্কার করছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসান আলী। উদ্যানটিও এই অধিদপ্তরের অধীন। তিনি বলেন, ২৬ মার্চকে সামনে রেখে ১৫ জনের একটি দল ১৪ তারিখ থেকে উদ্যান পরিষ্কারের কাজ করছেন। জাতীয় দিবসগুলোর আগে বড় দলে ভাগ হয়ে এমন পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। এমনিতে সারা বছর তিন-চারজনের একটি দল কাজ করে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নগর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শওকত উল্লাহ উদ্যান দেখভালের দায়িত্বে আছেন। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আয়তন প্রায় ৬৮ একর। পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন চারজন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই লোকবল নিয়ে এত বড় এলাকা পরিষ্কার রাখা কঠিন। তাই উদ্যান পরিষ্কার রাখতে ৭১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়মিত কাজ করবেন, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই তাঁরা কাজ শুরু করবেন।