Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বরূপে ফিরেছে কুয়াকাটা

করোনার কারণে ফাঁকা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে এখন লাল কাঁকড়া দল বেঁধে ছোটাছুটি করে। গতকাল সকালে সৈকতের কাউয়াচর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

শান্ত সকাল! সৈকত লাগোয়া জলে নির্বিঘ্নে সাঁতার কাটছে মাছেদের দল। একসময় সারা বছর এখানে দেখা মিলত এমন মাছের ঝাঁক। পাখিদের কলরবে মুখরিত থাকত গোটা এলাকা। বালুতে লাল কাঁকড়ারা ছোটাছুটি করত। কিন্তু পর্যটকদের আনাগোনা, যন্ত্রচালিত ট্রলারের গর্জনে মাছ, পাখি, কাঁকড়ারা সব পালায়। দেশে চলমান সাধারণ ছুটি চলছে। কুয়াকাটা সৈকতে মানুষের ভিড় নেই। দূষণ নেই সাগরের জলেও। সাগরপারের বাসিন্দারা বলছেন, এই সুযোগে বিচ লাগোয়া পানিতে মাছের আনাগোনা বেড়েছে। বিচে নেই ময়লা-আবর্জনা। আশার খবর শুনিয়েছেন পরিবেশবিদেরাও। তাঁরা বলছেন, কুয়াকাটা আবার ফিরেছে তার নিজ রূপে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ সৈকতও রূপ বদলায়। শীতের কুয়াকাটা শান্ত, বর্ষায় তা উত্তাল। পর্যটকদের কাছে এর আলাদা আবেদন রয়েছে। কারণ, এই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। তাই কুয়াকাটা সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণে মুখর থাকে।

১৯৯৮ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার পর থেকে সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কুয়াকাটা। বিনিয়োগকারীরাও ছুটে এসে হোটেল-মোটেলসহ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। কুয়াকাটাকে সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

পর্যটকদের আগমনে শান্ত কুয়াকাটা ব্যস্ত নগরে রূপ নেয়। সৈকত লাগোয়া হোটেলের বর্জ্য, প্লাস্টিকের বোতল, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে সৈকতের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সৈকতে যানবাহন চলাচল, সৈকতসংলগ্ন সাগরে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের অবাধ চলাচল জীববৈচিত্র্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। একসময় সৈকতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি আর লুকোচুরি খেলা দেখা গেলেও মানুষের পদচারণে তা হারিয়ে যায়।

করোনারভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মুখে গত ১৯ মার্চ থেকে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন কুয়াকাটায় পর্যটকদের যান চলাচল নিষিদ্ধ করে। পরে পুরো জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপস্থিতি নেই। হোটেল-মোটেল, দোকানপাট বন্ধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সৈকত, নেই কোথাও ময়লা–আবর্জনা। ছোট ছোট নানা জাতের মাছের ছোটাছুটি চোখে পড়ে। 

সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা এবং গঙ্গামতি পয়েন্টে গেলেই এখন লাল কাঁকড়া চোখে পড়বে। সকালে ও সন্ধ্যায় ভাটার সময় সমুদ্রসৈকত থেকে পানি যখন নামতে শুরু করে, তখন অসংখ্য লাল কাঁকড়ার মিছিল ছুটে চলে। তখন সৈকতজুড়ে আলপনার মতো অনিন্দ্য শোভা ফুটে ওঠে। 

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ বলেন, কুয়াকাটার সৌন্দর্যই পর্যটকদের কুয়াকাটায় টেনে নিয়ে আসে। তবে পর্যটকদের অনুপস্থিতিসহ সবকিছু বন্ধ থাকায় কুয়াকাটা তার নিজের রূপ ফিরে পেয়েছে। পর্যটকদের আগমনের পরও যেন এভাবে কুয়াকাটার সৌন্দর্য ধরে রাখা যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। 

কুয়াকাটা সম্পর্কে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, একোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এই সময়ে পর্যটক না থাকায় বিচ ও বিচের কিনারার পানিতে দূষণ নেই। এর ফলে জলজ উদ্ভিদ ও কিনারায় প্রচুর মাছ থাকাটাই স্বাভাবিক।