
ইসিবি চত্বর থেকে মানিকদী, বালুঘাট হয়ে বাউনিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। ভাঙাচোরা, এবড়োখেবড়ো সড়ক দেখে বোঝার উপায় নেই শেষ কবে সংস্কার করা হয়েছিল। অপ্রশস্ত সড়কে বড় বড় গর্ত এবং সড়কবাতি না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
গতকাল শুক্রবার এলাকার অন্তত ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরে এলাকায় বহু ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে, বাসিন্দার সংখ্যা বেড়েছে। শুধু সড়কের বেহাল দশার কারণে এলাকাটি পিছিয়ে আছে। গত বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর প্রার্থীরা সড়ক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা হয়নি।
ইসিবি চত্বর থেকে মানিকদী, বালুঘাট হয়ে বাউনিয়া বাজার পর্যন্ত চলাচলের প্রধান বাহন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব অটোরিকশা উত্তরা জসীমউদ্দীন অ্যাভিনিউ পর্যন্ত চলাচল করে। ভাঙা রাস্তায় এসব অটোরিকশায় চলাচলে সমস্যা হওয়ায় অনেকেই হেঁটে চলাচল করেন। ইসিবি চত্বর দিয়ে মানিকদী সড়কে প্রবেশ করতেই ভাঙা অংশ শুরু। মানিকদী আদর্শ বিদ্যানিকেতন, মানিকদী বাজার, বালুঘাট বাজার, বাইগারটেক, কালীবাড়ি মোড় সবখানেই সড়কের বেহাল অবস্থা।
>কয়েক বছরে এলাকায় বহু ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে, বাসিন্দার সংখ্যা বেড়েছে। শুধু সড়কের বেহাল দশার কারণে এলাকাটি পিছিয়ে আছে। নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর প্রার্থীরা সড়ক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা হয়নি
অটোরিকশাচালক মো. রাসেল বলেন, ‘এই রাস্তায় এক দিন গাড়ি চালাইলে শরীরব্যথায় দুই দিন বইস্যা থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে গাড়ি উল্টায় যায়। সকালে ভাঙা রাস্তায় জ্যাম লাইগ্যা যায়। গর্তের লিগা গাড়িতে স্পিড তোলা যায় না।’
গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, মানিকদী আদর্শ বিদ্যানিকেতনের ফটকের সামনে সড়কের কোনো অস্তিত্বই নেই। শুধু গর্ত আর ভাঙা ইট। গর্তের ওপর দিয়ে ইজিবাইক ছাড়াও চলাচল করছিল ট্রাক, পিকআপ। বিদ্যানিকেতনের বিপরীত পাশেই ওয়াসার নতুন পানির পাম্প বসানোর কাজ চলছে। নতুন পাম্প বসানোর আগে পানি পরীক্ষামূলকভাবে তোলা পানির অংশ সড়কে জমে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ইসিবি মোড় থেকে ভেতরে সহজে রিকশা আসতে চায় না। এত বড় গর্ত অটোগুলো কখন যে ওল্টায় সে ভয়ে থাকতে হয়। মানিকদী থেকে বালুঘাট বাজার পর্যন্ত এবং কালীবাড়ি মোড় থেকে বাউনিয়া বাজার অংশে চলতে হয় প্রাণ হাতে নিয়ে।
সড়কের এখানে-ওখানে গর্ত। হাঁটার সুবিধার জন্য ফেলা হয়েছে ইট, সুরকি। পিচ সরে গেছে বহু আগেই। গর্ত দেখে দেখে ধীরে চলতে হচ্ছে অটোরিকশাগুলোকে। মানিকদী থেকে বালুঘাট পর্যন্ত রাস্তার দশা একেবারে করুণ। মানিকদী থেকে বালুঘাটের দিকে যেতে পার হতে হয় বড় বড় গর্ত।
সড়কটি খুব বেশি প্রশস্ত নয়। পাশাপাশি দুটি অটোরিকশা যেতেও বেগ পেতে হয়। বিপরীত দিক দেখে ট্রাক বা বড় কোনো যানবাহন এলে অটোরিকশাগুলোকে সড়কের পাশের জমিতে নেমে জায়গা দিতে হয়। সড়কে কয়েকটি সড়কবাতির খুঁটি আছে। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এসব বাতির অধিকাংশই রাতে জ্বলে না।
বালুঘাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল সড়কের ভালো অংশ। বাইগারটেক, হাজী মার্কেটের সামনের অংশ মানিকদী বা বালুঘাটের চেয়ে ভালো। কালীবাড়ি মোড় থেকে বাউনিয়ার দিকে যেতে আবার সড়কের অবস্থা বেহাল।
বিমানবন্দর সড়কের বিকল্প সড়ক হতে পারত এই মানিকদী-বালুঘাট সড়কটি। মিরপুর ও আশপাশের সঙ্গে উত্তরা ও এর পাশের এলাকাগুলোয় চলাচলের জন্য সড়কটি ব্যবহার হতে পারত। কিন্তু বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহার দূরের কথা, সড়কটির অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে।
ইসিবি চত্বর থেকে কালীবাড়ি পর্যন্ত রাস্তার অংশটি পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ভাঙাচোরা এ সড়ককে সমস্যা বলে মনে করেন না ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেক মোল্লা। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে খুব বেশি সমস্যা নেই। কয়েকটি সড়ক আছে ভাঙাচোরা। তা-ও খুব বেশি না। ইসিবি চত্বর থেকে কালীবাড়ি পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারকাজ দ্রুতই শুরু হবে।