
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ অাগস্ট পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।
এ সম্পর্কে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান জানালেন, এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ, হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। হজের প্রশিক্ষণও নিতে হবে। হজ প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য তথ্য ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয় থেকে জানা যাবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বইপুস্তক বা পরিচিতদের কাছ থেকেও হজবিষয়ক তথ্য জানতে পারেন। আর হজের প্রয়োজনীয় তথ্য www.hajj.gov.bd ঠিকানায় পাওয়া যাবে।
হজে যাচ্ছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করুন—‘হে আল্লাহ! আমার হজকে সহজ করো, কবুল করো’—দেখবেন, আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হজের দীর্ঘ সফরে ধৈর্য হারাবেন না। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মানসিকতা রাখবেন, তাহলে অল্পতেই বিচলিত হবেন না।
হজে যাওয়ার আগে
পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট সংগ্রহ ও তারিখ নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। নিয়ম মেনে ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিন দিয়ে নিন। হজের নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন। ‘প্রথম আলো হজ গাইড’ চাইলে সংগ্রহ করতে পারেন।
www.prothom-alo.com/hajj- থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন। অথবা যাঁরা পড়তে পারেন না, তাঁরা হাজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। হজের কোনো বিষয়ে বিভিন্নতা দেখলে ঝগড়া করবেন না। আপনি যে আলেমের ইলম ও তাকওয়ার ওপর আস্থা রাখেন, তার সমাধান অনুযায়ী আমল করবেন, তবে সে মতে আমল করার জন্য অন্য কাউকে বাধ্য করবেন না।
প্রয়োজনীয় মালপত্র
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। যেমন: ১. পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ, ২. পুরুষের জন্য ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট (প্রতি সেটে শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ এক টুকরা কাপড়। ইহরামের কাপড় সাদা, সুতি হলে ভালো হয়) আর নারীদের জন্য সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক পোশাকই ইহরামের কাপড় ৩. নরম ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল, ৪. ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটিবন্ধনী (বেল্ট), ৫. গামছা, তোয়ালে, ৬. লুঙ্গি, গেঞ্জি, পাজামা, পাঞ্জাবি (আপনি যে পোশাক পরবেন), ৭. সাবান, পেস্ট, ব্রাশ, মিসওয়াক, ৮. নখ কাটার যন্ত্র, সুই-সুতা, ৯. থালা, বাটি, গ্লাস, ১০. হজের বই, কোরআন শরিফ, ধর্মীয় পুস্তক, ১১. কাগজ-কলম, ১২. প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা (ভিড় বা অন্য কোনো কারণে ভেঙে গেলে ব্যবহারের জন্য), ১৩. বাংলাদেশি টাকা (দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য), ১৪. নারীদের জন্য বোরকা, ১৫. যত দিন বিদেশে থাকবেন, সেই অনুযায়ী নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ নেবেন, ১৬. মোবাইল সেট (সৌদি আরবে ব্যবহার করা যায়, তেমন সিম কিনে নিতে হবে) ১৭. মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ অথবা স্যুটকেস (তালা-চাবিসহ) নিতে হবে। বাংলাদেশের পতাকা খচিত ট্রলি ব্যাগ (৫৬ সে.মি x২৫ সে.মি x ৪৫ সে.মি ) ও হাতব্যাগ নিজ দায়িত্ব সংগ্রহ করুন। ব্যাগের ওপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর লিখতে হবে। এর বাইরে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিতে হবে।
ঢাকার হজ ক্যাম্প
ব্যাগেজ নিয়মকানুন
বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না। বিমান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা অনুযায়ী বিমানে কোনো হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৪০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নিতে পারবেন না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য যেমন: রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
জরুরি কাগজপত্র
১০ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, স্ট্যাম্প আকারের ৬ কপি ছবি, পাসপোর্টের ২-৩ পাতার ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, টিকা কার্ড। নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরিয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ। সরকারি চাকরিজীবী হলে অফিস আদেশ বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে দেখাতে হয়। প্রত্যেক হজযাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা এজেন্সির নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর পরিচিতি নম্বর। ১০ সংখ্যার ট্র্যাকিং নম্বরটি প্রাক নিবন্ধনের সময় কম্পিউটারের দেওয়া নম্বর যেমন N11709F1E2C জানা থাকলে হজযাত্রী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন ওয়েবসাইটে ওই হজযাত্রীর তথ্য পেতে পারেন সহজে।
ইহরাম
আপনার গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায়—তা জেনে নিন। যদি মদিনায় হয়, তাহলে এখন ইহরাম করা নয়; যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন, তখন ইহরাম করতে হবে। বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। যদি মক্কায় যেতে হয়, তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরামের নিয়ত করা ভালো। কারণ, জেদ্দা পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ বা ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান। বিমানে যদিও ইহরামের নিয়ত করার কথা বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন; আর বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটাও দৃষ্টিকটু। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। তদুপরি গুনাহ হবে। ইহরাম গ্রহণের পর সাংসারিক কাজকর্ম নিষেধ—যেমন সহবাস করা যাবে না, পুরুষদের জন্য কোনো সেলাই করা জামা, পায়জামা ইত্যাদি পরা বৈধ নয়, কথা ও কাজে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না, কোনো ধরনের সুগন্ধি লাগানো যাবে না, কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না, ক্ষতিকারক সব প্রাণী মারা যাবে। ক্ষতি করে না এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।
ঢাকা বিমানবন্দর
উড্ডয়নের সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে লাগেজে যে মালপত্র দেবেন, তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না, দেখে নেবেন। বিমানের কাউন্টারে মালপত্র রেখে এর টোকেন দিলে তা যত্ন করে রাখবেন। কারণ, জেদ্দা বিমানবন্দরে ওই টোকেন দেখালে সেই ব্যাগ আপনাকে ফেরত দেবে। ইমিগ্রেশন, চেকিংয়ের পর নিজ মালপত্র যত্নে রাখুন।
জেদ্দা বিমানবন্দর
বিমান থেকে নামার পর দেখবেন, একটি হলঘরে বসার ব্যবস্থা করা আছে। অবতরণ কার্ড, হেলথ কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি কাগজপত্র বের করুন। এই হলঘরের পাশেই ইমিগ্রেশন কাউন্টার।ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসা দেখে (ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে) পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল দেবে। বিমানের বেল্টে মালামাল খুঁজে নিরাপত্তা-তল্লাশির জন্য মালামাল দিন। তারপর মোয়াল্লেমের কাউন্টার। প্রত্যেক মক্তব বা মোয়াল্লেমের নির্দিষ্ট নম্বর আছে। মোয়াল্লেমের কাউন্টার থেকে মিলিয়ে নেবেন তঁার অধীন কোন কোন হজযাত্রী সৌদি আরবে এসে পৌঁছেছেন।
হজ টার্মিনাল
মক্কায় পৌঁছানোর পর
ওমরাহ
পরামর্শ
হজের সময় লক্ষ করুন
টিকা দেওয়া
হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং যেসব জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে, সেখান থেকে করতে পারবেন।
তথ্য
www.hajj.gov.bd ওয়েবসাইটে ১০ সংখ্যার ট্র্যাকিং নম্বরটি প্রাক নিবন্ধনের সময় কম্পিউটারের দেওয়া নম্বর যেমন N11709F1E2C জানা থাকলে হজযাত্রী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন ওই হজযাত্রীর তথ্য পেতে পারেন সহজে। হজ তথ্য সেবা কেন্দ্রে +৮৮০৯৬০২৬৬৬৭০৭ ফোন করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় মালপত্র
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা এখন থেকেই শুরু করুন। আপনার মালপত্র হালকা রাখুন। কারণ, আপনাকেই তা বহন করতে হবে।
নিয়মকানুন
হজের নিয়মকানুন জানতে প্রয়োজনীয় বইপুস্তক পড়ুন। প্রথম আলো হজ গাইড সংগ্রহ করতে পারবেন হজ ক্যাম্প অথবা প্রথম আলো কার্যালয় থেকে। www.prothom-alo.com/hajj থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন।
তালবিয়া
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নিয়মাতা লাকা ওয়াল্মুলক, লা শারিকা লাক।
দোয়া কবুলের জায়গা
পবিত্র মক্কায় কাবা শরিফের বিভিন্ন জায়গায় দোয়া কবুল হয়ে থাকে। সেসব জায়গায় দোয়া করা দরকার।
১. মাতাফ—তাওয়াফ করার স্থানকে মাতাফ বলে।
২. মুলতাজাম—হাজরে আসওয়াদ থেকে বায়তুল্লাহর দরজা পর্যন্ত স্থানে।
৩. হাতিমের মধ্যে।
৪. মিজাবে রহমতের মধ্যে।
৫. কাবাঘরের ভেতরে।
৬. জমজম কূপের কাছে (যদিও কূপ এখন বেসমেন্টের নিচে, চাইলেও এখন দেখা যায় না)।
৭. মাকামে ইবরািহমের কাছে।
৮. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের ওপর।
৯. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে।
১০. বায়তুল্লাহর দিকে যখন নজর পড়ে।
১১. রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে।
১২. আরাফাতের ময়দানে।
১৩. মুজদালিফার ময়দানে। ১৪. মিনার ময়দানে এবং মিনার মসজিদে খায়েফে।
১৫. কঙ্কর মারার স্থানে।