লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার পাঠকেরা আজ বৃহস্পতিবার ‘প্রথম আলো’ পায়নি। হকারেরা জানিয়েছেন, হাতীবান্ধা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমানের সহায়তায় সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের লোকজন সকালেই সব পত্রিকা হকারদের কাছ থেকে নিয়ে গেছেন।
আজ ‘প্রথম আলো’য় ‘বিপন্ন সাংবাদিক পরিবার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় একজন সাংবাদিকের পরিবারের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা করেছেন প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকজন। মূলত এ কারণেই প্রতিমন্ত্রীর লোকজন পত্রিকা নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার হকার আসাদুল ইসলাম ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘হাতীবান্ধা থানার আনিছ দারোগা মুঠোফোনে আমাকে “প্রথম আলো”র সব কপি (৪৯) নিয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা সদরের শাহ গরিবুল্লাহ হোটেলে যেতে বলেন। আমি কপিগুলো নিয়ে সেখানে যাই। এরপর আমার কাছ থেকে সব পত্রিকা নিয়ে নেন আনিছ দারোগা। হাতীবান্ধার হকার শফিকুল, রমজান ও ইউনুছ আলীও সেখানে ছিলেন। তাঁরা আমাকে বলেছে, তাদের পত্রিকাও এই দারোগা নিয়ে নিয়েছে। পরে আমাকে দাম দেওয়ার কথা রয়েছে।’
পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া বাজারের পত্রিকার হকার খলিল উদ্দীন বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা সাব্বির আমার কাছ থেকে ৩৫ কপি “প্রথম আলো” নিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন পরে টাকা দিয়ে দেবেন।’
পাটগ্রামের ‘প্রথম আলো’র এজেন্ট হামিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন বেলা ১১টার দিকে পাটগ্রাম স্টেশন থেকে আজ ৪২০ কপি প্রথম আলো টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে গেছেন। এত পত্রিকা নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মোফাজ্জল বলেন, ‘আপনারা এইগুলো কী লেখেন?’
লালমনিরহাট জেলার ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার এজেন্ট সাজিদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার হকারেরা আমাকে জানিয়েছেন, এসআই আনিছুর রহমান ও আওয়ামী লীগের লোকজন “প্রথম আলো”র ৬৫৫ কপির সবগুলো নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে কিছু পত্রিকার দাম দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর দাম পরে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাতীবান্ধা থানার এসআই আনিছুর রহমান ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘আমি তো হাতীবান্ধা থেকে সকালে পাঁচ কপি “প্রথম আলো” কিনেছি।’ বাকিগুলো কে কিনেছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের ছেলের ঘনিষ্ঠ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হামিদুল হক বাকি পত্রিকাগুলো কিনেছেন বলে শুনেছি।’ আপনি তো সব হকারকে গরিবুল্লাহ হোটেলের সামনে আসতে বলেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আনিছ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এত পত্রিকা কিনে নেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে হামিদুল হক বলেন, ‘হ্যাঁ আমি সব পত্রিকা নিয়ে গেছি। কেন নিয়েছি আপনারা বোঝেন না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতীবান্ধা থানার ওসি তাপস সরকার বলেন, ‘আজকের “প্রথম আলো” পত্রিকার এতগুলো কপি আনিছ দারোগা কেন নিয়েছেন, সে বিষয়ে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, আজকের সংবাদে তাঁর বিষয়ে কথা আছে। তাই তিনি পাঁচ কপি কিনেছেন।’
এসআই আনিছ প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধি ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘হাতীবান্ধার এসআই আনিছুর রহমান কেন এতগুলো “প্রথম আলো” কিনে নিল, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’