অভিমত

হিন্দু নারীদের জন্য বড় বিজয়

সুলতানা কামাল। ফাইল ছবি
সুলতানা কামাল। ফাইল ছবি

২ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম, আদালত রায় দিয়েছেন হিন্দু নারী যাঁরা বিধবা হয়েছেন, তাঁরা তাঁদের স্বামীর সব সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন। আমরা যাঁরা প্রায় অর্ধশতক ধরে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছি, এটি তাঁদের প্রত্যেকের জন্য একটি অনেক বড় সুসংবাদ। বিশেষ করে হিন্দু নারীদের জন্য এটি একটি বিরাট বিজয়। দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছিলেন। তবে তাঁদের প্রচেষ্টা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই বাধা এসেছে তাঁদের নিজেদের সম্প্রদায়ের সংরক্ষণশীল অংশের কাছে থেকেও। কোনো সরকারই এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এবার আদালতের কাছে থেকে যে রায় এসেছে, তার কারণে পরিবার এবং সমাজ—উভয় ক্ষেত্রেই হিন্দু বিধবা নারীদের অবস্থান অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সম্পত্তিতে ভাগ পাওয়া শুধু সাধারণ কিছু পাওয়ার বিষয় না, এটা একজন নারীকে আত্মসম্মান নিয়ে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচার উপায় করে দেয়। এত দিন পর্যন্ত কারও না কারও সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে থাকার মতো ভয়ংকর একটা অসহায় ও অসম্মানজনক অবস্থায় ছিলেন এসব নারী। এই অসহায়ত্ব থেকে তাঁরা মুক্তি পাবেন, কারও ওপর নির্ভর করে তাঁকে বাঁচতে হবে না। এটা যে কত বড় একটা সম্মান, তা যেকোনো ভুক্তভোগীই অনুধাবন করতে পারবেন।

এখন বিদ্যমান আইন ‘হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রোপার্টি অ্যাক্ট ১৯৩৭’ অনুযায়ী, হিন্দু বিধবা নারীদের কেউ (সেটা পিতা, পুত্র বা পরিবারের কর্তৃত্ব যার হাতে তিনি হতে পারেন) ভরণপোষণ দেবেন এবং জীবনস্বত্বে সম্পত্তির অধিকার পাবেন। কিন্তু তিনি এ সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন না। বিক্রি বা নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারবেন না। সেই জায়গায় একটা বড় পরিবর্তন এল। আমি যদি রায়টা ভালো করে বুঝে থাকি, তবে জীবনস্বত্ব থাকলে তিনি কারও না কারও ওপর নির্ভরশীল থাকেন। এবার এ রায়ের ফলে তিনি মালিকানা পাবেন এবং একজন আত্মনির্ভর, সম্মানিত ব্যক্তি ও নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।