
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবু হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পর মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নাটোর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার হত্যার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় সিআইডি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, এজাহারের প্রধান আসামি বনপাড়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা কে এম জাকির হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন মোল্লা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কে এম জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার অপর আসামি বাদশা মিয়া তদন্তকালে মারা যাওয়ায় তাঁর নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০১০ সালের ৮ অক্টোবর বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া শহরে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেখানে জেলা বিএনপির তৎকালীন ও বর্তমান সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদারেরও যোগদানের কথা ছিল। তাঁর পৌঁছানোর আগেই সানাউল্লাহ নূর বাবু মিছিল নিয়ে বনপাড়া বাজারের দিক যাচ্ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা মিছিলে হামলা চালিয়ে সানাউল্লাহ নূর বাবুকে গুরুতর আহত করে। ওই দিন বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরদিন তাঁর স্ত্রী মহুয়া নূর কোচি বাদী হয়ে বড়াইগ্রাম থানায় ২৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালতে সংযোজনের দরখাস্ত দিয়ে ৪৫ জনকে আসামি করেন তিনি। প্রথমে থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করলেও পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই জানান, এটি চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক হত্যা মামলা। তাই সাক্ষ্য–প্রমাণ সংগ্রহ করে অভিযোগপত্র জমা দিতে বেশ কিছু সময় লেগেছে। তদন্তের এজাহারনামায় প্রাপ্তবয়স্ক ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ৩ জনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।
বাদী মহুয়া নূর কোচি বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারিনি এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার চার্জশিট ১১ বছর পর দেওয়া হবে। বিচার শুরুর আগে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় অনেক সাক্ষ্য–প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করা যাবে না। ফলে আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হব। আসামিরা এর সুবিধা ভোগ করবে।’ তবে কোনো আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ না দেওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মামলার রায়ের জন্য আবার কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, সে বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানান তিনি।
মামলার প্রধান আসামি বনপাড়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র কে এম জাকির হোসেন বলেন, ওই ঘটনার আগে বিএনপির ক্যাডারদের হামলায় তাঁর বাবা নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাদের নামে মামলা হয়েছিল। সেই আক্রোশ থেকেই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তাঁরা নির্দোষ। আদালতে সবকিছু প্রমাণ হবে।