
সরকারি নথিতে গ্রামটির অস্তিত্ব আছে। আছে ফসলি জমি, পুকুর, গাছগাছালি। শুধু নেই কোনো কোলাহল। মানুষের বসতির চিহ্ন হয়ে টিকে আছে ঘরবাড়ির কিছু ধ্বংসাবশেষ।
মানুষশূন্য এই গ্রামের নাম মঙ্গলপুর। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে এই গ্রামের অবস্থান। জনশ্রুতি আছে, বহু বছর আগে মঙ্গলপুর গ্রামের মানুষের মধ্যে ‘অমঙ্গল’ আতঙ্ক ভর করে। ভয়ে তখন গ্রাম ছেড়ে চলে যায় মানুষ।
কোটচাঁদপুর এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, ৬০-৬৫ বছর আগে মঙ্গলপুর গ্রামে মহামারি আকারে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক মানুষ মারা যান। আতঙ্কে অন্যরা আশপাশের গ্রামে আশ্রয় নেন। কিছু পরিবার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যায়।
শৈশবে মঙ্গলপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন কালীপদ মুখার্জী (৯২)। এখন পাশের গ্রাম বলাবাড়িয়ায় থাকছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাঁর ছোটবেলায় গ্রামে কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে। অনেক মানুষ মারা যায়। তিনি বলেন, ওই সময় একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের খাল-বিল, পুকুর-কুয়ার পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে থাকলে সবাইকে মরতে হবে। ভয়ে দলে দলে গ্রাম ছাড়তে শুরু করে মানুষ। তিনি বলেন, তাঁরাসহ কয়েকটি পরিবার পাশের বলাবাড়িয়া ও চাকলা গ্রামে আশ্রয় নেন। পরে ওই গ্রামে আর ফিরে যাননি।
কালীপদ মুখার্জী বলেন, সবাই গ্রাম ছাড়লেও তাঁর মামা নেঠে ঠাকুর একাই মঙ্গলপুরে থাকতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর আগে খুন করা হয় তাঁকে। এর পর থেকে ওই গ্রামে আর কোনো মানুষ থাকে না।
এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান বলেন, ১৬টি গ্রাম নিয়ে এলাঙ্গী ইউনিয়ন। এর মধ্যে মঙ্গলপুরও রয়েছে। তবে ওই গ্রামে কোনো মানুষ থাকে না। তিনি বলেন, লোকমুখে শুনেছেন, অনেক বছর আগে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে যায় মানুষ।
বলাবাড়িয়া গ্রামের সুধান্য দাস (৭৫) বলেন, তাঁরা ছোটবেলায় ওই গ্রামে বেড়াতে যেতেন। একসময় সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।
মঙ্গলপুর গ্রামে নিজের জমি চাষ করতে যান বলাবাড়িয়া গ্রামের ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, তাঁরা ভারতের বনগাঁও থেকে দেশভাগের পর এ দেশে এসেছেন। গড়ান চন্দ্র নামে মঙ্গলপুরের এক ব্যক্তির সঙ্গে জমি বিনিময় করেন তাঁরা।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মঙ্গলপুর। কোটচাঁদপুর সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান।
এলাঙ্গী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলপুর গ্রামটি ৬৬ নম্বর মঙ্গলপুর মৌজায় অবস্থিত। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ মৌজায় একটিই গ্রাম আছে। গ্রামে ২০৬টি খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলপুর নামে গ্রাম আছে। সেখানে কোনো ভোটার নেই।
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ পাল বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। একটি গ্রাম মানুষশূন্য হয়ে গেছে কী কারণে তা খুঁজে দেখবেন বলে তিনি জানান।