
‘চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে, চোক্ষের সামনেই পদ্মা আমাগো সব দাবাইয়া নিল। জিনিসপত্র তাড়াহুড়া কইরে বাইর কইরা রাস্তায় নিয়া সারতে পারছিলাম না। আমাকেও নদীতে নিইয়া যায়। সাঁতার পাইরা ওপরে উইঠা আসি। ঘরের কোনো জিনিস রক্ষা করতে পারি নাই।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ১ নম্বর ফেরিঘাট-সংলগ্ন হোটেল ব্যবসায়ী আজাদ খাঁ (৪৫)। পদ্মার ভাঙনের সময় তিনি খাবার হোটেলে বসে খাবার বিক্রি করছিলেন।
আজ বুধবার কথা হয় ফেরিঘাট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে বাতাস শুরু হলে পদ্মা নদীর পাড় ভাঙা শুরু হয়। ঝুঁকি থাকায় ১ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ ফেরির র্যামের নিচে ও আশপাশের মাটি দেবে গভীরে যেতে থাকে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেরিঘাট-সংলগ্ন তিনটি খাবার হোটেল ও মুদির দোকান নদীগর্ভে যায়। ঘাট-সংলগ্ন সিদ্দিক কাজী পাড়ার ছয়টি পরিবারের বসতভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। অনেকে জিনিসপত্র সরাতে না পেরে চিৎকার করতে থাকেন।
মাদার মণ্ডলের বসতভিটা চলে গেছে নদীতে। তিনি ওই সময়ের বর্ণনা দিয়ে বললেন, রিকশা চালিয়ে ফিরে তিনি ফেরিঘাট সড়কে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এমন সময় পাশে তিনটি খাবার হোটেল ও মুদির দোকান নদীতে পড়ে যেতে দেখে সবাই অবাক হয়ে যান। আশপাশের বাড়ি থেকে চিৎকার করতে থাকেন সবাই। দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে দেখেন যে তাঁর ভিটেমাটি সব দেবে যাচ্ছে। তাড়াহুড়া করে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঘরের মালামাল বের করে রাস্তায় নিয়ে যান। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মুহূর্তেই সব চলে যায় নদীর পেটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, চোখের সামনে ফেরিঘাট সড়কের অন্তত ৪০ ফুট ভেঙে র্যাম ভাসতে থাকে। দ্রুত ঘাট বন্ধ করে উদ্ধারকারী জাহাজের সাহায্য চাওয়া হয়। স্থানীয় র্যাকার দিয়ে র্যাম টেনে রাখা হয়। র্যামসহ পন্টুনকে পাটুরিয়া থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি-৩৮৯-এর সাহায্যে রাত সাড়ে ১২টার পর ফেরিতে গাড়ি ওঠানো-নামানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া উদ্ধারকারী জাহাজটি দিয়ে ঘাটটিকে আজ সকাল পর্যন্ত ধরে রাখা হয়।
আইটি-৩৮৯-এর ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সংবাদ পেয়ে রাত ১০টার দিকে ১ নম্বর ঘাটে পৌঁছেই র্যামসহ পন্টুনটিকে ঠেকিয়ে রাখেন তাঁরা। আইটি না থাকলে হয়তো র্যামসহ পন্টুন রাতেই ভেসে যেত। তবে ঘাট রক্ষায় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে বিলীনের আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খালিদ মাহমুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক জিনাত আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ ঘোষ, উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম নুরুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিসির আরিচার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সোবহান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণ্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।