‘সর্বনাশী পদ্মা আমগো ঘরবাড়ি, জমি—সবই খাইছে। এ বছর আমার ভাই ও ভাইয়ের ছেলেসহ চার পরিবারের জায়গাজমি, ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বাকি আছে কেবল বড় ভাইয়ের কবরটা। যেভাবে ভাঙন ধরেছে, তাতে ভাইয়ের স্মৃতিচিহ্নও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। পদ্মা এটাও খাওয়ার জন্য ছটপট করতাছে।’ কথাগুলো দোহার উপজেলার নারিশা ইউনিয়নের নারিশা পশ্চিম চর গ্রামের কৃষক মো. কুতুবউদ্দিন ব্যাপারীর (৬৮)।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পদ্মার ভাঙনে এবার নারিশা পশ্চিম চর ও পার্শ্ববর্তী বেলতলা গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে অন্তত দুই শ পরিবার অন্য স্থানে সরে গেছে। দুই গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনে দুটি গ্রামের বেশির ভাগ জমি বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পারে ৩০-৩৫টি বসতভিটা ভাঙনে কবলে। এসব পরিবারের লোকজন নারকেলগাছের পাতা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
নারিশা পশ্চিম চর গ্রামের গৃহবধূ শারমিন সুলতানা (৩৫) বলেন, তিন বছর আগে তাঁদের ভিটায় পাঁচ বিঘা জমি ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে এক বিঘা অবশিষ্ট ছিল। এ বছর তা-ও বিলীন হয়ে গেছে। একই এলাকার আরেক গৃহবধূ সালমা বেগম (৪৮) বলেন, ‘দুই বছর আগে তিনটি টিনশেডের ঘর নির্মাণ করেছিলাম। বসতভিটার বাকি অংশে সবজি ও ফসলাদি চাষ করতাম। গত বছর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়। এ বছর ঘরদোর নদীতে তলিয়ে গেছে।’
পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে বেলতলা গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম হাওলাদারের (৫৮) বাড়ি। তিনি বলেন, গ্রামের কমপক্ষে ৬০টি পরিবার নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই গ্রামের নুরুল হক শেখ বলেন, ‘আমার পৈতৃক ভিটায় ২২ কাঠা জমি ছিল। এ বছর ভাঙনে বেশির ভাগ জায়গা নদীতে বিলীন হয়েছে। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে বাকি জায়গাটুকুও থাকবে না। তাই নদীর পাড়ে নারকেলগাছ ও গাছের পাতা ফেলে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছি; যদি কিছু জমি রক্ষা হয়। সরকারের কাছে ত্রাণ চাই না, ভাঙন রোধের পদক্ষেপ চাই।’
নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন দরানী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম আল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার বানভাসি ৪ হাজার ২২২ পরিবার এবং নদীভাঙনের শিকার ৮০৫ পরিবারের মাঝে সরকার ২৮ টন চাল ও দেড় লাখ টাকা বিতরণ করেছে। আরও সাত টন চাল এবং দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এসব ত্রাণ দু-এক দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, গতকাল দুপুরে ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) এমডি আল আমিন নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনের জন্য মৈনট ঘাট এলাকা থেকে নারিশা ঘাট পর্যন্ত যান।